অবশেষে সন্ধান মিললো ‘টাইটান’ সাবমেরিনের ধ্বংসাবশেষ তবে খোঁজ মিলল না পাঁচ ব্যবসায়ী অভিযাত্রীর। আটলান্টিকের অতলেই তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে শুক্রবারএ বিবৃতি দিয়েছিল সাবমেরিন সংস্থা ওসিয়ানগেট। কিন্তু তাদের দেহ এখনও খুঁজে পাওয়া না গেলেও ফ্রান্সের রোবটের মাধ্যমে সমুদ্রের প্রায় ১২ হাজার ফুট গভীরে খুঁজে পাওয়া গেল টাইটানের ধ্বংসাবশেষের।
গত রবিবার কানাডার পূর্বে নিউ ফাউন্ডল্যান্ডের উপকূলে থেকে পাঁচ যাত্রী নিয়ে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখার জন্য রওনা দিয়েছিল টাইটান সাবমেরিন। টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ থেকে ৬০০ কিমি দূরে অবস্থিত এই নিউ ফাউন্ডল্যান্ড এবং তার পরে ‘মাদারশিপ’ থেকে টাইটান বিচ্ছিন্ন হয়ে ডুব দেয় টাইটানিকের উদ্দেশ্যে।সব মিলিয়ে সাত ঘণ্টার মধ্যেই জলের তলদেশ থেকে ফিরে আসার কথা ছিল সাবমেরিনটির।কিন্ত ডুব দেওয়ার পোনে দু’ঘণ্টা পরই ঘটে দুর্ঘটনা। ‘মাদারশিপ’-এর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় টাইটানের।
স্থানীয় সময়ে রবিবার সকাল ৯টা ৪৫ মিনিট নাগাদ টাইটানের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয় মাদারশিপের। বিকেল ৫টা ৪০ মিনিট নাগাদ খবর দেওয়া হয় আমেরিকার উপকূলরক্ষী বাহিনীকে।খবর পাওয়ার পর থেকেই শুরু হয় উদ্ধারকাজ।উদ্ধার করার জন্য কোস্ট গার্ড থেকে শুরু করে হাত লাগিয়েছিল বায়ুসেনাও। কিন্তু, কেউ টাইটানের সন্ধান পেতে সক্ষম হয়নি। দীর্ঘ তিন-চার দিন খোঁজাখুঁজির পর মেলে অবশেষে মেলে টাইটানের ধ্বংসাবশেষ। শেষমেশ ফরাসি এক রোবটই ত্রাতা হিসেবে এগিয়ে এসেছিল। জানা গিয়েছে, ফ্রান্সের সমুদ্র গবেষণা প্রতিষ্ঠান‘ইফ্রেমার’ ‘ভিক্টর ৬০০০’ নামক রোবটিকে তৈরি করেছিল। এই রোবটই খুঁজে বের করে টাইটানকে।জানা যাচ্ছে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের ১৬০০ ফুট দূরেই পাওয়া গিয়েছে টাইটান সাবমেরিনের ধ্বংসাবশেষ।
দুর্ঘটনার পর থেকেই নানা প্রশ্ন উঠেছে সমস্ত মহলে। কী করে আস্ত একটা সাবমেরিন নিখোঁজ হল, কী করেই বা তা ধ্বংস হল, কেমন করে ঘটল– গোটা বিষয়টা, বিস্ময়ে হতবাক সকলেই। জন মাগার জানিয়েছেন, এখনই এসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সহজ নয়। যেমন তথ্য মিলবে, তেমনই তাঁরা সব জানতে পারবেন। তবে প্রাথমিক ভাবে অনুমান করা হচ্ছে জলের চাপের কারণে ডুবোযানটি দুমড়েমুচড়ে গিয়েছিল। এমনিতে ওসেনগেটের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, টাইটান সাবমেরিন ৪০০০ মিটার বা ১৩ হাজার ১২০ ফুট গভীর পর্যন্ত যেতে পারে। এদিকে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩৮০০ মিটার বা ১২ হাজার ৪০০ ফুট গভীরে। এদিকে সেই গভীরতায় জলের চাপ থাকে ৬০০০ পাউন্ড প্রতি ইঞ্চি। মার্কিন নৌবাহিনী তরফে জানানো হচ্ছে, যেই সময় মাদারশিপের সঙ্গে টাইটানের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়, সেই সময়ই তারা একটি জলযানের দুমড়েমুচড়ে যাওয়ার আওয়াজ পেয়েছিল। .
প্রসঙ্গত, ১৯১২ সালে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবে গেছিল যাত্রীবাহী জাহাজ টাইটানিক। মৃত্যু হয়েছিল দেড় হাজার মানুষের। তার ১১১ বছর পরেও মহাসাগরের তলায় রয়েছে সেই টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ। সমুদ্র অভিযাত্রীদের কাছে এই ধ্বংসাবশেষ দেখতে যাওয়ার এই বিশেষ অ্যাডভেঞ্চার পরিচালনা করে ‘ওশানগেট’। তাদেরই সাবমেরিন টাইটান যাত্রী-প্রতি ২ কোটি টাকার বিনিময়ে দেখাতে নিয়ে যায় টাইটানিক। গত রবিবারও তেমনই পাঁচ যাত্রী, পাক ধনকুবের শাহজাদা দাউদ ও তাঁর পুত্র সুলেমান, ব্রিটিশ ব্যবসায়ী হামিশ হার্ডিং ও পল-হেনরি নারগিওলে এবং এই অভিযানের আয়োজক সংস্থা ওশানগেটের সিইও স্টকটন রাশে নিয়ে সমুদ্রের ১৩ হাজার ফুট গভীরে নেমেছিল টাইটান। টাইটানিকের কাছাকাছি গিয়ে ধ্বংসাবশেষ নিজেদের চোখে চাক্ষুষ করেও ফিরে আসা হলো পাঁচ অভিযাত্রীর।