অতীতের মহালয়ার ভোরে আলো পুরোপুরি ফোটার আগেই শোনা যেত বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের `মহিষাসুরমর্দিনী’। সেই সময় মোবাইল কিংবা ইন্টারনেট এর তেমন চল ছিল না। টিভিতে সম্প্রচারিত সরকারি চ্যানেল এবং রেডিও র মাধ্যমেই শোনা হতো মহালয়া। প্রথম রেডিওতে শুনে তারপর দেখা হত দূরদর্শন এ সম্প্রচারিত মহিষাসুরমর্দিনী র অনুষ্ঠান। ১৯৯৪ সালে প্রথম দুর্গা রূপে দেখা যায় সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায় কে এবং অসুরের ভূমিকায় উঠে এসেছিলেন অমল চৌধুরী।
অতীতের মহালয়া মানে তিনিই মহিষাসুর। মহালয়ার কাহিনীকে পর্দায় জীবন্ত করে তুলতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। পোষাকি নাম অমল চৌধুরী হলেও বছরের পর বছর টিভির পর্দায় অসুরের চরিত্র করতে করতে তাঁর নাম অমল অসুরে পরিণত হয়। এই অমল অসুরের বিকট অট্টহাসি বাচ্ছা থেকে বড়ো সকলেরই বুক কাঁপিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। মাথা ভর্তি কোঁকড়া চুল, বিরাট চেহারা, মোটা গোঁফওয়ালা সেই অমল অসুর টিভির পর্দার প্রথম মহিষাসুর। এছাড়াও অনেকসময় যমরাজের অভিনয়তেও দেখা গেছে তাঁকে। কিন্তু এসব এখন অতীতের পাতায়। দূরদর্শন পর্দার অমল অসুরের আর ডাক পড়ে না মহালয়াতে। বয়স এর থাবা পড়েছে শরীর জুড়ে, চুলে ও পাক ধরেছে।
হাবড়ার অশোকনগর এর বাসিন্দা আমাদের অতীতের মহিষাসুর। অতীতে রূপালী পর্দায় যাত্রা শুরু হলেও তার শেষ টা খুব একটা ভালো হয়নি। বর্তমানে সংসার চালাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় তাঁকে। অর্থাভাবে কোনোরকমে দিন কাটছে তাঁর। স্টুডিও থেকে আর ডাক না আসায় দিনযাপন করতে তিনি হাতে তুলে নিয়েছেন রং ও তুলি। বাড়িতেই খুলেছেন আঁকার স্কুল। একইসাথে কাজ করেন গাড়ির নাম্বার প্লেট লেখার। অসুস্থ বোন এবং আঁকার স্কুলই তাঁর এখনকার সঙ্গী। অতীতের রূপোলী দিনের কথা ভেবে এখন ও মাঝেমাঝে ই চোখে জল আসে আমাদের অমল অসুরের।