অ্যাডিনোভাইরাসের সংক্রমণে যে কাশি হচ্ছে, তা কমাতে ওষুধ, সিরাপ কিংবা ভেপার (বাষ্প)নয়, বরং চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ইনহেলার হলো ভরসা। একই রকম ভাবে বাড়ছে চোখের সমস্যাও।চলতি মরসুমে এক বার কাশি ধরলে, ১৫ দিনের আগে তা সেরে ওঠার উপক্রম নেই । শহর থেকে জেলা, সর্বত্র অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অধিকাংশ শিশুরাই এখন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। চিকিৎসকদের মতে, মাঝবয়সিরা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন না ঠিকই, কিন্তু তাঁদের জ্বর কমে যাওয়ার পরেও দীর্ঘ দিন থেকে যাচ্ছে কাশি । প্রায় প্রতিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র -এ দিনে যত রোগী আসছেন, তার অধিাংশই জ্বর-কাশিতে আক্রান্ত। কারও শুকনো কাশি, কারও সামান্য কফ বেরোচ্ছে।
বেলেঘাটা আইডি-র বক্ষরোগ বিশেষজ্ঞ কৌশিক চৌধুরীর জনিয়েছেন, ‘‘অনেকেরই জ্বর ছাড়াও শুধু কাশি হচ্ছে। প্রচলিত সিরাপ, অ্যান্টিবায়োটিকেও তা সেরে উঠছে না। ওনার মতে আসলে এই সংক্রমণে শ্বাসনালি সঙ্কুচিত হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে ইনহেলার থেরাপিতে কিছু পরিমাণে মিলছে রেহাই” । কিন্তু ইনহেলার নিতে নারাজ বহু রোগীই। তাঁদের মতে, এই থেরাপির অর্থ, ফুসফুসের বড়সড় কোনও ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। এই বিভ্রান্তি সমস্যা আরও বাড়াচ্ছে বলে মত মেডিসিন বিভাগের বিশেষজ্ঞ অরুণাংশু তালুকদারের। ওনার কথায়, ‘‘ওই রোগীদের বোঝাতে পারা যাচ্ছে না যে, শ্বাসনালি ও টনসিল গ্রন্থির প্রদাহে ইনহেলার সরাসরি কাজ করবে। যাঁরা ইনহেলারে সুস্থ হচ্ছেন, তাঁদের অন্যকে বোঝাতে হবে।”
এছাড়া অ্যাডিনোভাইরাসে বড়দের কাশি বা চোখের সমস্যা বাড়ার কারণ জানতে চাইলে,এই প্রশ্নের জবাবে ভাইরোলজিস্ট সিদ্ধার্থ জোয়ারদার জনিয়েছেন যে অ্যাডিনো ডিএনএ ভাইরাস হওয়ায় কোষের নিউক্লিয়াসের মধ্যে বংশবিস্তার করে, যা শরীরের প্রতিরোধী ব্যবস্থাপনাকে ফাঁকি দিয়ে তা টনসিল ও অ্যাডিনয়েডের লিম্ফয়েড টিসুতে বহু দিন থেকে যায়। আসলে, অ্যাডিনোভাইরাসের বহিরঙ্গে থাকা পেরেকের মতো অংশটি লিম্ফয়েড, চোখের কনজ়াংটিভাল-সহ বিশেষ কিছু কোষকে আক্রমণের জন্য বেছে নেয়। তাতে কোষে সংক্রমণ ও প্রদাহ দীর্ঘস্থায়ী হয়।
ভাইরোলজিস্ট সিদ্ধার্থ জোয়ারদার আরও বলেন, “আক্রান্ত কোষের মৃত্যু ঠেকিয়ে অ্যাডিনো অনেক দিন আধিপত্য বজায় রাখতে পারে। তাই টনসিল ও ফ্যারিংসে ভাইরাস থেকে যাওয়ায় কাশিও সারতে চায় না। অ্যান্টিবায়োটিকের বদলে সেখানে ইনহেলারই কাজ করে’’। কনজ়াংটিভাইটিস পুরনো সমস্যা হলেও অ্যাডিনোভাইরাসের আক্রমণে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি, জানাচ্ছেন চক্ষু বিশেষজ্ঞ হিমাদ্রি দত্ত।তিনি বলছেন, ‘‘অ্যাডিনোর দু’টি সেরোটাইপ মিশে রিকম্বিন্যান্ট ভাইরাসের কারণেই আক্রান্তের সংখ্যা বেশি বলে মনে হচ্ছে’’। কনজ়াংটিভাইটিসের রোগীর সংখ্যা গত তিন সপ্তাহে বাড়ছে বলে পর্যবেক্ষণ চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ জ্যোর্তিময় দত্তের। তিনি জানান, বহু ক্ষেত্রে চোখের সাদা অংশের আবরণ হিসাবে থাকা ঝিল্লি বা কনজ়াংটিভাকে অ্যাডিনোভাইরাস আক্রমণ করছে যার কারণে লাল হচ্ছে চোখ, এর সঙ্গে ব্যাক্টিরিয়ার দ্বারা দ্বিতীয় সংক্রমণও ঘটছে।
চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ জ্যোর্তিময় দত্ত আরও জানান, “বড়দের এমন সমস্যা বেশি। তাঁদের কর্নিয়ায় সংক্রমণের ফলে ছোট ছোট ছাপ তৈরি হয় এর ফলে দৃষ্টিতে অস্বচ্ছতা আসছে, দৃষ্টিহীন হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।” বেশির ভাগ কনজ়াংটিভাইটিস অর্থাৎ, চোখ লাল হওয়ার পেছনে থাকছে সপ্তাহখানেক আগে হাওয়া জ্বর। গলা ব্যথা, টনসিল ফোলা, শুকনো কাশি, নাক দিয়ে জল পড়ার সমস্যাও মিলছে বলে মত চক্ষু বিশেষজ্ঞ শৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ওনার মতে, “অনেক রোগীর চোখের সাদা অংশ দিয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।এর ফলে বহু ক্ষেত্রেই দিতে হচ্ছে অ্যান্টি ব্যাক্টিরিয়াল ও অ্যান্টি ভাইরাল ওষুধ”।