হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্ট প্রকাশের পর থেকে গত এক মাসে আদানি গোষ্ঠীর সংস্থাগুলি প্রায় ১২ লক্ষ কোটি টাকার শেয়ার সম্পদ হারিয়েছে, যা টিসিএসের মোট শেয়ার সম্পদের সমান। বিশ্বের তৃতীয় বিত্তবানের আসন দখল করা গৌতম আদানি এক ধাক্কায় নেমেছেন ৩০ নম্বরে। এমতাবস্থায় বাজার বিশেষজ্ঞদের একাংশের প্রশ্ন, তবে কি আদানি গোষ্ঠী ভারতের এনরন হতে চলেছে? অন্য আর এক অংশের বক্তব্য, আদানিদের সংস্থাগুলির যে দীর্ঘমেয়াদি ব্যবসায়িক চুক্তি রয়েছে, তাতে আপাতত নগদের জোগান এবং ঋণ শোধে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। দেনা মেটানোর পাশাপাশি লগ্নিকারীদের আস্থা ফেরাতে আইনি পরামর্শ নিতে শুরু করেছে তারা।
আমেরিকার অন্যতম বৃহৎ জ্বালানি সরবরাহকারী সংস্থা এনরনের বিরুদ্ধে দেনার অঙ্ককে কম দেখিয়ে এবং ব্যবসায়িক ক্ষতি লুকিয়ে বড় মুনাফা দেখানোর অভিযোগ উঠেছিল। তা প্রকাশ্যে আসার পরে সংস্থার শেয়ার দর ব্যাপক হারে কমে যেতে শুরু করে। শেষে ২০০১ সালে দেউলিয়া ঘোষণা করা হয় সংস্থাটিকে। মাস খানেক ধরে আদানিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং তার জেরে লাগাতার গোষ্ঠীর সংস্থার সংস্থাগুলির শেয়ার দরের পতনের সঙ্গে এনরন কেলেঙ্কারিরই মিল খুঁজে পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
হিন্ডেনবার্গের রিপোর্ট দাবি করেছিল, এক দশক ধরে কারচুপি করে কৃত্রিম ভাবে শেয়ারের দাম বাড়িয়েছে আদানি গোষ্ঠী। কর্ণধার গৌতম আদানির ব্যক্তিগত শেয়ার সম্পদও বেড়ে চলেছে সেই একভাবেই। মরিশাস-সহ বিভিন্ন দেশে ভুয়ো সংস্থার মাধ্যমে বেআইনি ভাবে শেয়ার লেনদেন মারফত তা করা হয়ে থাকে বলে অভিযোগ । অভিযোগ, এগুলি পরিচালিত হয়েছে গৌতমের দাদা বিনোদের মাধ্যমে। এমনকি, অম্বুজা সিমেন্টস এবং এসিসি কেনার পরে খোলা বাজার থেকে শেয়ার কিনতেও ভুয়ো সংস্থাগুলির পুঁজি ব্যবহৃত হয়েছিল। রিপোর্টের দাবি অনুযায়ী, আদানি সাম্রাজ্যের বিস্তার মূলত ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের (গত সেপ্টেম্বরে ২.২৬ লক্ষ কোটি টাকা) উপরেই দাঁড়িয়ে।
অভিযোগের অভিঘাতে আদানি গোষ্ঠীর সংস্থাগুলির শেয়ারে নেমে আসে কালের ছায়া। একটা সময়ে রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ়ের কর্ণধার মুকেশ অম্বানীকে পিছনে ফেলে মূলত শেয়ার সম্পদে ভর করেই বিশ্বের তৃতীয় ধনী ব্যক্তি হয়েছিলেন গৌতম আদানি। ব্যক্তিগত সম্পদ ছিল প্রায় ৯.৮৪ লক্ষ কোটির উর্ধ্বে। এখন তা নেমেছে এক-তৃতীয়াংশে। বিত্ত সূচকে নেমে এসেছেন ৩০ নম্বরে। যেখানে মুকেশ আম্বানি র নম্বর ১০। আদানিরা অবশ্য হিন্ডেনবার্গের সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ওয়াচটেল, লিপটন-সহ আমেরিকার প্রথম সারির চারটি আইন সংস্থার পরামর্শ নিচ্ছে। দাবি করেছে, লগ্নিকারীদের আস্থা ফেরাতে আগাম দেনা শোধের পদক্ষেপ করা হচ্ছে।