বর্তমান সময়ে আমাদের পরিবেশ আধুনিকীকরনের বেড়াজালে নিমজ্জিত। ভারত তথা সমগ্রবিশ্বের উন্নত দেশগুলিতে আধুনিকীকরনের ছোঁয়ায় পরিবেশের উজ্জ্বল আলো ক্রমশ অন্ধকারের পথে চলমান। পরিবেশে অবনতি ও সামাজিক পরিবর্তনের অন্যতম কারণ হল নতুন প্রযুক্তির আগমন। প্রধানত আধুনিকীকরনের পর থেকেই সামাজিক পরিবর্তনে কৃষিভিত্তিক সমাজ থেকে শিল্পায়নে অগ্রসর হয়েছে। ফলে প্রযুক্তিগত দিকে নজর দেওয়া জরুরী হয়ে পড়ে। প্রযুক্তিগত কারণে প্রবল ভাবে সামাজিক পরিবর্তন দেখা যায়।
ভারতে কলকাতা , দিল্লী সহ বিভিন্ন শহরে বারংবার শব্দদূষণ ও বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেওয়ার পরেও আজও তা ব্যর্থ। বড় বড় শহরে বিভিন্ন ফ্যাক্টরি, কলকারখানা ও নতুন নতুন ব্যবসার দাপটে পরিবেশ কে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। উৎসবের সময়ে কলকাতায় শব্দ দূষণ রোধে পুরোপুরি সফল হয়নি প্রশাসন। তাই বহু পরিবেশকর্মীদের নিশানায় বিদ্ধ হতে হয়েছে প্রশাসনকে । পরিবেশকর্মীদের সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চের’ সাধারণ সম্পাদক নব দত্ত বলছেন, ‘‘প্রতি বছর শুধু একটি নির্দেশিকা পুলিশ, জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠিয়েই নিজেদের দায় ঝেড়ে ফেলে পর্ষদ। এমন চলতে থাকলে সম্ভবত আগামী ১৮ বছরেও এ রাজ্যে সাউন্ড লিমিটরের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা যাবে না।’’
অন্যদিকে দিল্লিতে ছোটো ছোটো পড়ুয়াদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে শুধুমাত্র পরিবেশ তথা বায়ু দূষণের কারণে। প্রায় ২৭৫৫ টি স্কুল বন্ধ করা হয়েছে করোনার জন্য নয় বরং বায়ু দূষণের জন্য। আধুনিকীকরন এইভাবে পরিবেশকে পুরোদমে শেষ করে ফেলছে। ইতিমধ্যেই ভারত সরকার জানিয়েছে ভারতকে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন শূন্যে পরিনত করবে। তবে প্রতিবারই উদ্যোগ নেওয়া হয় তবে বাস্তবটা এখনও পর্যন্ত খুব এইটা স্বাস্থ্যকর হয়নি সাধারণ মানুষদের জন্য। পৃথিবী বিপর্যয়ের পথে ৮০ শতাংশ পথ এগিয়ে গিয়েছে, প্রাক-শিল্প পরিস্থিতির তুলনায় বিশ্বের তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। ভবিষ্যতে সতর্কতার সীমারেখা পার করে কার্বন নির্গমন অব্যাহত থাকবে এবং প্রাক-শিল্প পরিস্থিতির তুলনায় বিশ্বের তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পাবে বলেই মনে হয়। বায়ুমণ্ডলে কার্বনের সার্বিক পরিমাণ দুই-তৃতীয়াংশ বাড়ানোর দিকে পৃথিবী এগিয়ে চলেছে। জলবায়ুর পরিবর্তন অনিবার্য হয়ে পড়েছে। আর এর মূল্য চোকাতে হচ্ছে বা হবে লক্ষ-কোটি মানুষকে, যাঁদের বেশির ভাগই গরিব। পৃথিবীর অনেক জায়গাই অচিরে বাসযোগ্যতা হারাবে। বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর অবলুপ্তি বাড়তে থাকবে। বিভিন্ন দেশের সরকার টের পাবে যে, এই সব পরিবেশগত, অর্থনৈতিক এবং মানবিক সমস্যাগুলির মোকাবিলা করার মতো অর্থ বা সম্পদ তাদের হাতে নেই। সব মিলিয়ে বিপর্যয় ঘনীভূত হয়ে উঠবে। পরিশেষে , আমাদের জীবন তথা সমস্ত কিছু ভারসাম্যর উপর নির্ভর করে। সবকিছুরই ভালো মন্দ আছে যা একে অপরের ভারসাম্য রক্ষা করে। আধুনিকীকরন অবশ্যই দরকার তবে অন্যদিকে পরিবেশ ধ্বংস হলে তখন আর আধুনিকীকরন কোনো কাজেই আসবে না। অর্থাৎ আমাদের ভারসাম্য দিয়েই আধুনিকীকরন ও পরিবেশকে একে অপরের পরিপূরক করতে হবে।