ভারতীয় সিনেমা তথা বিশ্ব সিনেমার কিংবদন্তি পরিচালক সত্যজিৎ রায় এর জীবনের অন্যতম অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও প্রথম কাজ ‘ পথের পাঁচালী’। এই ছবি করতেই তরুণ সত্যজিৎ রায় কে যে প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয় সেই নেপথ্য কাহিনীকেই ৬৭ বছর পর বড় পর্দায় তুলে ধরলেন পরিচালক অনীক দত্ত। পর্দায় জিতু নাকি স্বয়ং সত্যজিৎ রায় তা দর্শক দের কাছে বড়ই অবাকের বিষয়। হ্যাঁ, এমনটাই হয়েছে অপরাজিত সিনেমা। নানা বাধা পেরিয়ে অবশেষে ১৩ ই মে মুক্তি পেল অনীক দত্ত এর অনবদ্য সৃষ্টি ‘ অপরাজিত’ । ক্রমে বাড়ছে শো সংখ্যা, বাঙালির মুখে মুখে ফিরছে এই ছবির নাম।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতনে ছবি আঁকার উপর পড়াশোনা শেষ করে বিজ্ঞাপন সংস্থায় কাজ শুরু করেন সত্যজিৎ রায়। সত্যজিৎ রায়ের প্রথম গ্ৰাম বাংলার সঙ্গে পরিচয় বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিরন্তন উপন্যাস ‘ আম আঁটির ভেঁপু ‘ র অলঙ্করণ ও প্রচ্ছদ আঁকার সময়। আঁকা ও সিনেমার প্রতি প্রেম তাঁর প্রথম থেকেই, তাই নিজেই তৈরী করে ফেললেন ফিল্ম সোসাইটি। সঙ্গে ছিলেন ডি কে গুপ্ত, চিদানন্দ দাশগুপ্ত, শাঁটুলবাবু এবং তাঁর সর্বক্ষণের সঙ্গী স্ত্রী বিজয়া রায়। স্ত্রী বিজয়া রায় কে নিয়ে ৬ মাসের জন্য লন্ডনে থাকাকালীন ইউরোপীয় সিনেমার সান্নিধ্যে আসেন সত্যজিৎ। ডি সিকার ‘ বাইসাইকেল থিভস ‘ ছবিটি তাঁকে উদ্বুদ্ধ করেছে ছবি বানাতে, এই সবই রয়েছে ছবির প্রথমার্ধে।
ছবিতে অপু-দুর্গা রূপে মানিক-উমার কাশবনের মধ্যে দিয়ে প্রথম ট্রেন দেখতে যাওয়া, ভাই বোনের বৃষ্টিতে ভেজা, হাঁড়ি বোঝাই করে মিষ্টি ওয়ালার গ্ৰাম বাংলার রাস্তা দিয়ে মিষ্টি নিয়ে যাওয়া এবং তার প্রতিচ্ছবি। চুনিবালা দেবী রূপে ননীবালা দেবীর মৃত্যু, সর্বজয়া কিংবা হরিহর রূপে সর্বমঙ্গলা ও হরিমাধব এবং সর্বোপরি বোরাল রূপে সড়াল গ্ৰাম এই সবই আমাদের সত্যজিৎ রায় এবং তাঁর সৃষ্টি র কথা গাঢ়ভাবে মনে করিয়ে দেয়।
পরিচালক অনীক দত্ত চরিত্র দের পাশাপাশি ‘ পথের পাঁচালী ‘ র নাম পরিবর্তন করে রাখেন ‘ পথের পদাবলী ‘। সত্যজিৎ রায় ওরফে অপরাজিত রায়- এর চরিত্রে জিতু কামাল এক কথায় অনবদ্য। সত্যজিৎ রায়ের বসার ভঙ্গিমা, কথা বলার ধরণ, চোখের সেই চাহনি, সবই যেন জিতুর নিখুঁতভাবে আত্মস্থ। বিজয়া রায় এর ছায়ায় তৈরী বিমলা রায় এর চরিত্রে যথেষ্ট সাবলীল আজকের সায়নী ঘোষ। ছবিতে দেবজ্যোতি মিশ্রের আবহ সঙ্গীত, সুপ্রতীম ডোলের সিনেমাটোগ্রাফি প্রশংসার দাবি রাখে। জিতু র ম্যানারিজম, ও চন্দ্রাশিষ রায়ের কন্ঠ এক ম্যাজিকাল মুহূর্ত সৃষ্টি করে দর্শক দের সামনে।
সবশেষে বলা যায়, বাঙালির ভাল ছবি দেখার খিদে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে অপরাজিত। একাধিক শো বাড়ানোর সাথে সাথে হলের বাইরের হাউসফুল বোর্ড এর সংখ্যা ও বাড়ছে ক্রমশ। হল ভর্তি দর্শক রয়েছেন বিভিন্ন বয়সের, যা একটি ছবির সফলতা প্রকাশে যথেষ্ট। বাঙালি যেন তাদের প্রিয় মানিক দা কে আবার করে উদযাপন করছে এ ছবির মাধ্যমে। বাংলা সিনেমায় আরও হোক এরকম ‘অপরাজিত’ , বেঁচে থাকুক সবার প্রিয় সত্যজিৎ রায়।