৭ই অক্টোবর ২০২৩, গাজা থেকে হামাসের আকস্মিক ভয়ংকর বোমাবর্ষণ ইজরায়েলের উপর। সেই থেকেই সূত্রপাত ইজরায়েল – প্যালেস্টাইন যুদ্ধের, প্রাণহানির সংখ্যা অগনিত, কিন্তু তারপরেও যুদ্ধের সমাপ্তির বিষয়ে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই দুই দেশের মধ্যে। এবার দুই দেশের এই নির্মম হত্যালীলা র শিকার হতে হল এক ভারতীয় সেনা প্রাক্তন কর্মী কে, নাম বৈভব অনিল কালে। চলতি মাসের ১৩ ই মে গাজা থেকে একটি হাসপাতাল পরিদর্শন করতে যাওয়ার সময় ইজরায়েলি সেনার বোমাবর্ষণে বৈভব কালে র অকালপ্রয়াণ ঘটে।
১৯৯৮ সালে নাগপুরের বাসিন্দা ( বর্তমান বসতি পুনে,মহারাষ্ট্র) বৈভব কালে প্রথম ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন । তারপর থেকেই নানান সাহসী কর্মকান্ডের মাধ্যমে নজির স্থাপন করেন তিনি। ১১ নং জম্মু ও কাশ্মীর রাইফেলসের অন্যতম সেনাকর্মীর পদে নিযুক্ত ছিলেন তিনি। এছাড়াও সিয়াচেনে কঠিন প্রাকৃতিক পরিবেশে সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব ও পালন করেন তিনি। সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পর মাত্র তিন সপ্তাহ আগে তিনি জাতিসংঘের ‘ সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি ’ বিভাগে যোগ দেন। সেই সূত্রেই তাঁর গাজা ভ্রমণ। তবে সেই ভ্রমণ ই যে এত নির্মম, দুঃখজনক পরিণতির কারণ হবে সেটি হয়তো কেউই আশা করেনি। ৪৬ বছর বয়সী প্রাক্তন এই ভারতীয় সেনা অফিসার গাজার রাফাহ অঞ্চল থেকে খান ইউনিস এলাকার একটি হাসপাতাল পরিদর্শনে যাওয়ার পথে ইজরায়েলি সেনার বোমাবর্ষণে বৈভব কালের এই প্রয়াণ ঘটে। জানা গিয়েছে, রাফাহ অঞ্চল থেকে বৈভব জাতিসংঘের পতাকা লাগানো একটি গাড়িতে করে হাসপাতাল পরিদর্শন করতে যাচ্ছিলেন। সেই সময় ওই গাড়ি লক্ষ্য করে ইজরায়েলি সেনাবাহিনী বোমাবর্ষণ করে ,তারই পরিণতি কালে র মৃত্যু। বৈভবের সাথে জাতিসংঘের আরও একজন সদস্য সেই হাসপাতাল পরিদর্শনে যাচ্ছিলেন, কিন্তু তাঁর মৃত্যু না হলেও গুরুতরভাবে আহত হন তিনি।
এই হামলার পর জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস মানবিক সহায়তা কর্মীদের সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তার উপর বিশেষ জোর নিক্ষেপ করেছেন এবং এই ঘটনার চরম নিন্দা র পাশাপাশি অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন “রাফার ইউরোপিয়ান হাসপাতালে যাওয়ার পথে ইজরায়েলি হানায় রাষ্ট্রসংঘের এক কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও এক কর্মী। আমরা সরকার এবং ভারতের জনগণের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করছি, সমবেদনা জানাচ্ছি।” এই ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রাক্তন কর্নেল বৈভব অনিল কালে র অকাল মৃত্যু তে শোক প্রকাশ করে গত ২০ মে মোদিকে চিঠি লিখেছেন প্যালেস্টাইন প্রধানমন্ত্রী মহম্মদ মোস্তফা ও। চিঠিতে তিনি লিখেছেন ‘ভারতীয় সেনার প্রাক্তন আধিকারিকের মৃত্যু আসলে ইজরায়েলি গণহত্যার একটা অংশ। গাজার আমজনতার উপর মানবাধিকার বিরোধী অভিযান চালাচ্ছে ইজরায়েলি সেনা (Israel Defence Force)। সেই বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের মধ্যেই অন্যতম হল সেনার বোমাবর্ষণে ভারতীয়র মৃত্যু।’