আমরা ছোটবেলা থেকে বিজ্ঞান বইতে পড়ে আসছি, পরিবেশ কি?, কিভাবে আমরা পরিবেশকে রক্ষা করি কিন্তু সত্যি কি আমরা এখনের সমাজে দাড়িয়ে বলতে পারি যে পরিবেশ পুরোপুরিভাবে আমরা রক্ষা করতে আমরা পেরেছি? কি মনে হয়, হাঁ ঠিকই মনে হয় আমরা পুরোপুরিভাবে রক্ষা করতে তো পারিনি বরং উল্টে আরোও ক্ষতি করেছি। কি রকম ভাবে ক্ষতি করছি সেটা আর নাই বলাম, কি করিনি আমরা জল দূষণ, বায়ু দূষণ, ভূমি দূষণ, শব্দ দূষণ আরোও কত কী, বলতে শুরু করলে হয়তো শেষ হবে না। মানুষ তার পরিবেশের দাস হয়েও যে কিভাবে নিজের ব্যাবহার করা পরিবেশের প্রতিনিয়ত কতটা পরিমাণ ক্ষতি করে চলেছে হয়তো নিজেরাই বুঝতে পারছে না। তাই এই ক্ষতিকারক দিক থেকে বাঁচার জন্যে ব্যক্তি রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সজাগ ও সচেতন ভূমিকা পালন করতে হবে তবেই পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকবে।
বিশ্বায়ন অর্থাৎ গ্লোবালাইজেশন শব্দটি একুশের শতকের শুরুতে থেকেই আন্তর্জাতিক ও বিশ্বে মানবিক আদর্শ রূপে সারা পৃথিবীতে প্রচারিত হচ্ছে। বিশ্বায়ন হলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশ গুলির মধ্যে ঐক্যবদ্ধতকে বেশি আরও বেশি করে প্রাধান্য দেয়। তাছাড়াও বিভিন্ন দেশের মধ্যে আর্থিক আদান-প্রদানের মাধ্যমে পারস্পরিক সহযোগিতা গড়ে তুলতে সাহায্য করে এই বিশ্বায়ন। বিশ্বায়নের ফলে উন্নত উন্নয়নশীল বিশ্বের মধ্যে এক বৈষম্যের প্রকট হয়েছে। আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার বিশ্ব ব্যাংক এবং বিশ্ব বাণিজ্যিক সংস্থা কর্তৃত্ব গৃহীত বৈষম্যমূলক নীতির ফলে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলি ক্রমশ উন্নত দেশগুলির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। বিশ্বায়ন ফলে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে পরিবেশের উপর এক বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। বহুজাতি সংস্থাগুলি এই সমস্ত এলাকায় যেসব শিল্প গড়ে তুলেছে সেগুলির কারণে যথেষ্ট ভাবে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে পরিবেশের ব্যাপারে উন্নত বিশ্বের মতো কোনো কঠোর আইন না থাকার কারনে বহু জাতিক সংস্থা গুলি খুব সহজেই এখানে পরিবেশ দূষণকারী শিল্প গড়ে তুলতে পারছে। তাছাড়া ও বিশ্ব বাণিজ্য অবস্থান অবাধ বাণিজ্য নীতি সুযোগ থাকার কারণেই উন্নত দেশগুলির উৎপাদন কেন্দ্রের বজ্র পদার্থ উন্নয়ন দেশে পরিত্যক্ত হওয়ার ফলে সেখানকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, আর এই দূষিত হওয়ার কারণেই পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।
মানুষ হল পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত ও চলনশীল জীব। মানুষ চাইলেই পরিবেশকে রক্ষা করতে পারে, দূষনের হাত থেকে এই পরিবেশকে বাঁচাতে। মানুষ যত উন্নত হয়েছে ততো বেশি করে উন্নত হয়েছে উন্নয়ন। এবং সেই উন্নয়নের সাথে সাথে হয়েছে দূষণ। কিন্তু তা বলে কি মানুষ থেমে যাবে? শুধুমাত্র পরিবেশ দূষণ হচ্ছে বলে উন্নয়ন থামিয়ে দেবে? না, মানুষ যতই এগিয়ে চলবে উন্নয়ন তত এগোবে, এই ধারণাকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে চলছে মানুষ। কিন্তু আমাদের এমন উন্নয়ন করতে হবে যাতে পরিবেশে কোনরকম ক্ষতি না হয়। তাই যেসব কারণে পরিবেশ রক্ষা করা যাবে সেইসব জিনিসগুলো করতে হবে যেমন বৃক্ষরোপণ, রাসায়নিক সারের পরিমাণ কমিয়ে জৈব সারের পরিমাণ বাড়াতে হবে, দূষিত কম হবে এমন যানবাহন ব্যবহার করতে হবে, এবং প্লাস্টিকের ব্যবহারের বর্জন করতে হবে। পরিবেশ নিয়ে বহু জায়গায় বহু সময় মিটিং মিছিল করা সত্ত্বেও মানুষেরা এখনো পরিবেশ নিয়ে সচেতন হয়ে উঠতে পারেনি। যদিও বেশ কিছু মানুষ এই পরিবেশকে নিয়ে বেশ সচেতন, কিন্তু তা হল হাতে গোনা কয়েকটা মানুষ যদি আমাদের পরিবেশকে একেবারে দূষণমুক্ত করতে হয় তবে একজন নয় আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে তবেই এক দূষণমুক্ত পরিবেশ গঠন করা যাবে।
আধুনিকতার জগতে বাস করার ফলে আমার এতটাই নিজেদের নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছি যে আমাদের আশেপাশের পরিবেশ নিয়ে আমাদের কোনরকম সচেতনাই নেই। যদি এত কিছু করার সত্ত্বেও মানুষ পরিবেশের গুরুত্ব না বোঝে তাহলে কিন্তু মানব সভ্যতা চিরতরে হারিয়ে যাবে। আর এর ধ্বংসলীলা শুধু আমরাই দেশেই সীমাবদ্ধ থাকবে না আমাদের প্রতিবেশী দেশ সহ বহুদেশে এর তান্ডব ছড়িয়ে পড়বে।