সম্প্রতি গঙ্গার জলের পরিমাণ কমে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা তাদের ‘স্টেট অফ গ্লোবাল ওয়াটার রিসোর্স ২০২১’ রিপোর্টে প্রকাশ করেছে, গত দুই দশকে গঙ্গার জলের মোট পরিমাণ কমেছে অনেকটাই। পাশাপাশি নদী তীরবর্তী অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ জলের পরিমাণও কমেছে বলে জানা যাচ্ছে। শুধু গঙ্গাই নয়, বিশ্বের নিরিখেও একই চিত্র ফুটে উঠেছে। দক্ষিণ আমেরিকার পাটাগনিয়ার সাও ফ্রানসিসকো নদীর অববাহিকা, সিন্ধু নদের অববাহিকা এবং দক্ষিণ-পশ্চিম আমেরিকার নদী অববাহিকা গুলিতেও ভূগর্ভস্থ জলের পরিমাণ কমে গেছে। তবে, অন্যদিকে নাইজার নদী অববাহিকা এবং উত্তর আমাজন নদী অববাহিকায় ভূগর্ভস্থ জলের পরিমান বেড়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার এই রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রভাবিত হচ্ছে ব্যবহারযোগ্য জলের উৎসগুলি। একদিকে উষ্ণায়নের জন্য হিমবাহ গলনের প্রভাবে জলস্তর বাড়তে দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে দেশের নিচের দিকের এলাকা অর্থাৎ পাঞ্জাব, হরিয়ানা উত্তরপ্রদেশের মত রাজ্য গুলিতে চাষাবাদের জন্য প্রচুর পরিমাণে ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে ক্রমশই কমছে ভূগর্ভস্থ জলের পরিমাণ।
ভূগর্ভে কতটা পরিমাণ জল সঞ্চিত আছে তার উপর ভিত্তি করেই এই রিপোর্ট তৈরি হয়েছে। জানা গেছে, উত্তর আফ্রিকা, মাদাগাস্কার, মধ্য এবং দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল, দক্ষিণ আমেরিকার মধ্য ভাগ, পাকিস্তান এবং উত্তর ভারতে ভূগর্ভস্থ সঞ্চিত জলের পরিমাণ স্বাভাবিকের থেকে অনেকটাই কম। আবার অন্যদিকে আফ্রিকার কেন্দ্রীয় অঞ্চল, দক্ষিণ আমেরিকার উত্তরাংশ অর্থাৎ অ্যামাজন অববাহিকা এবং চিনের উত্তরাংশে এই সঞ্চিত জলের পরিমাণ স্বাভাবিকের থেকে বেশি। এর কারণ হিসেবে অর্থাৎ সঞ্চিত জলের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার জন্য হিমবাহ গলনের প্রভাব কে দায়ী করা হয়েছে এবং জলের পরিমাণ কবে যাওয়ার জন্য নদী এবং ভূগর্ভস্থ জলের অত্যধিক ব্যবহারকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এপ্রসঙ্গে, পরিবেশ বিজ্ঞানী এবং কেন্দ্রীয় ভূ-বিজ্ঞান মন্ত্রকের সচিব এম. রাজীবন জানিয়েছে, ভূগর্ভস্থ জলের অত্যধিক ব্যবহার কে নিষিদ্ধ করার জন্য শীঘ্রই পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। তাছাড়া, উষ্ণায়নের ফলে একদিকে যেমন হিমবাহ গলোনের ঘটনা ঘটছে তেমনি এই কারণেই জল দ্রুত বাষ্পীভূত ও হচ্ছে। তাই অন্যান্য নিষিদ্ধকরণ এর পাশাপাশি উষ্ণায়নের প্রভাব কমাতে না পারলে এই ঘটনা আরোও মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে বলেই দাবি রিপোর্টে।