যে মহাসমুদ্র প্রায় হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল সেখান থেকে বেঁচে ফিরলেন আমেরিকার প্রাক্তন সাংবাদিক। প্রায় ২৩ বছর আগে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষে খোঁজে গিয়ে সেই ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়েও ওত গভীর থেকে কিভাবে বেঁচে ফিরলেন?কোনো কি অদৃশ্য শক্তি সহায়তায়?
টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের খোঁজে গিয়ে টাইটন ডুবোযানের পাঁচ যাত্রী নিখোঁজ হয়ে ছিল সমুদ্রের তলদেশে। প্রায় ৫ দিন পর ২২ জুন টাইটনের ধ্বংসাবশেষের সাথে মিলে ছিল কিছু দেহাংশ।
দেহাংশ গুলি আদেও সেই যাত্রীর কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়।তবে এই একই রকম অবস্থার শিকার হতে গিয়েও কিভাবে ফিরে এলেন, সে বিষয়ে জানিয়েছেন সাংবাদিক মাইকেল গিলেন।
অধুনা পদার্থবিদ গিলেন একটি সময় আমেরিকার প্রথম সারির সংবাদমাধ্যম ‘এবিসি’-তে বিজ্ঞান বিভাগের সম্পাদকের দায়িত্বর ভারপ্রাপ্ত ছিলেন । প্রায় ১৪ বছর ধরে সেই কাজে যুক্ত থাকার পাশাপাশি টেলিভিশনেও সাংবাদিকতা করেতেন।
আরেকটি অন্য পরিচয় তিনি খ্যাত ছিলেন ‘বেস্টসেলার’ বইয়ের লেখক হিসাবে।
গিলেনই প্রথম সাংবাদিক যিনি ২০০০ সালে দুজন সঙ্গীকে নিয়ে সমুদ্রের অত গভীরে গিয়ে খবর করার সাহসিকতা দেখিয়েছিলেন।
গিলেনের বহু বছর পর আবার ১৮ জুন টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে ওশানগেট সংস্থার ডুবোযান টাইটনের করে সমুদ্রের অতলে গিয়েছিলেন পাঁচ যাত্রী। ওই ডুবোযানটির মধ্যে ছিলেন ওশানগেট সংস্থার মুখ্য আধিকারিক স্টকটন রাশ, ব্রিটেনের ধনকুবের হামিশ হার্ডিং, পাকিস্তানের ব্যবসায়ী বা সেই দেশের অন্যতম ধনী ব্যক্তি শাহজ়াদা দাউদ ও তাঁর পুত্র সুলেমান এবং ফরাসি নাবিক পল-হেনরি নাজিওলে।
কিন্তু অভিযান শুরুর প্রাই ডের – দু’ঘণ্টার মধ্যেই টাইটনের সঙ্গে তার সহযোগী জাহাজ পোলার প্রিন্সের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এর পর ২২ জুন কানাডার নিউফাউন্ডল্যান্ডের উপকূল থেকে প্রায় ৬৫০ কিলোমিটার দূরে ও টাইটানিকের থেকে প্রায় ১,৬০০ ফুট দূরে এবং সমুদ্রপৃষ্ট থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার গভীরে টাইটনের ধ্বংসাবশেষের খোঁজ মেলে।
ঘটনার তদন্ত করছেন আমেরিকা এবং কানাডার দুই সংস্থা। কি ঘটেছিল তা এখনো স্পষ্ট নয় কিন্তু মনে করা হচ্ছে, জলের প্রবল চাপের ফলে টুকরো হয়ে গিয়েছে টাইটানিয়াম ও কার্বন ফাইবারের তৈরি ডুবোযান।
গিলেন জানিয়েছেন, ১৯৮৭ সালের রাশিয়ার তৈরি ডুবোযানে ব্রায়ান এবং রুশ চালক ভিক্টর কে নিয়ে তিঁনি ২০০০ সালে নিউফাউন্ডল্যান্ডের উপকূল থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে টাইটানিকের কাছে পৌঁছেছিলেন। ডুবোযানটি ছিল ‘মির ১’।
এক ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের সাক্ষাৎকারে তিঁনি জানিয়েছেন, টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের কাছে এগোনোর সময় হঠাৎই জলের প্রবল স্রোত ডুবোযানটিকে টেনে নিয়ে যায় এবং মুহূর্তের মধ্যেই টাইটানিকের ২১ টন ওজনের প্রপেলারগুলির দিকে এগিয়ে যেতে থাকে ডুবোযানটি। টাইটানিকের প্রপেলারের নীচে একটি খাঁজে আটকে পড়েন ডুবোযান সহ তাঁরা তিন জন।
যানটিকে বারবার আগু পিছু করলেও তারা ব্যর্থ হয়, প্রায় আধঘন্টা নিজেদের মৃত্যুকে যেন চোখের সামনে দেখেছেন, এমনই সময় হঠাৎ একটি প্রচণ্ড আওয়াজ ডুবোযানের ভিতরে ও টের পেওয়া গেল, জলের স্রোতে প্রবল শব্দে কিছু একটা ভাঙার শব্দ। তিনি জানিয়েছেন, ডুবোযানটির উপর টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের বিশালাকার কিছু ভেঙে পড়েছিল ডুবোযানটির উপর।
গিলেন নিজের বইয়ে লিখেছিলেন, ‘‘পরে জানতে পারি, দুর্ঘটনাবশত সমুদ্রের অতলে স্রোতের মধ্যে আটকে পড়েছিল ডুবোযানটি। মুহূর্তের মধ্যে টাইটানিকের প্রপেলারে গিয়ে ধাক্কা মারে ‘মির ১’। একটা গর্ত থেকে দেখতে পেলাম, সেটির উপর টাইটানিকে মরচে ধরা অংশ ভেঙে পড়ছে।’’ অন্তিম পর্যায়ে এসে যখন মৃত্যুর সময় গুনতে শুরু করে দিয়ে ছিলাম ঠিক সেই সময় হঠাৎ একটি ‘অদৃশ্য শক্তি’র আবির্ভাব ঘটে। তিনি লিখেছেন, ‘‘মুহূর্তের মধ্যে সব নিস্তব্ধ। আচমকাই (ডুবোযানের) ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। মনে হল, আমরা আবার ভাসতে শুরু করেছি।’’ ডুবোযানটির উপরে উঠেআসাটা কী ভাবে সম্ভব হয়েছিল তা আজও পর্যন্ত তাঁর কাছে অস্পষ্ট। খুব খ্রিস্টধর্মে বিশ্বাসী গিলেন লিখেছেন, ‘‘জীবনকে বিদায় জানানোর মুহূর্তে ঈশ্বরের উপস্থিতি এবং শান্তি উপলব্ধি করেছিলাম।’’