দেশের পরবর্তী প্রধান বিচারপতি হতে চলেছেন ধনঞ্জয় যশবন্ত চন্দ্রচূড়। সোমবার সেই কথা টুইট করে জানিয়েছিলেন আইনমন্ত্রী কিরণ ঋজু। মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে তার নাম প্রস্তাব করে কেন্দ্রের হাতে চিঠি তুলে দিলেন বিদায়ী বিচারপতি উদয় উমেশ ললিত। আগামী মাসের ৯ই নভেম্বর থেকে প্রধান বিচারপতির আসনে বসবেন যশোবন্ত চন্দ্রচূড় । আগামী দুবছর দুদিনের জন্য ওই পদে বহাল থাকবেন তিনি। দায়িত্বভার গ্রহণের পর তিনি হবেন দেশের ৫০ তম প্রধান বিচারপতি।
দেশের ভাবি প্রধান বিচারপতির বাবা যশোবন্ত বিষ্ণু চন্দ্রচূড়া ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ১৯৭৮ সাল থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রধান বিচারপতি ছিলেন তার বাবা। মূলত তার থেকেই আইনের বিষয়ে উৎসাহ তৈরি হয় যশোবন্ত চন্দ্রচূড়ের। ১৯৮২ সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় শিক্ষানবিশ আইনজীবী হিসাবে শুরু হয় তার কর্মজীবন। ১৯৯৮ সালে বোম্বে হাইকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী পদে উন্নীত হন তিনি। চার বছর তুই পর অর্থাৎ ২০০০ সালে বম্বে হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হন। ২০১৩ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি ছিলেন তিনি তারপর ২০১৬ সালের ১৩ই মে নিযুক্ত হন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসাবে, সামলান দেশের অতিরিক্ত সলিসেটর জেনারেল এর দায়িত্ব। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি থাকাকালীন একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায় এসেছে তার বেঞ্চ থেকে। আধার মামলার রায় থেকে শুরু করে সন্ত্রাস বিরোধী আইনের অপব্যবহার এবং দেশের সবচেয়ে বিতর্কিত মামলা রাম জন্মভূমি বাবরি মসজিদ মামলার জন্য সুপ্রিম কোর্টের ৫ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চের একজন ছিলেন যশোবন্ত চন্দ্রচূড়।
এখানেই শেষ নয় গুরুতর মামলার রায়ের পাশাপাশি তিনি সরব হয়েছিলেন একাধিক বিষয়। একাধিকবার প্রশ্ন তোলেন তার বাবার দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে। ৭৫ সালে জরুরি অবস্থা সময় ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বাধীন সরকার সমস্ত মৌলিক অধিকার খর্ব করেছিল ।সেই সিদ্ধান্তকে সায় দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্টের ৫ সদস্যের এক বেঞ্চ।সেই বেঞ্চের সদস্য ছিলেন ছিলেন বিচারপতি চন্দ্রচূড়ার বাবা। ১৯৭৬ সালে সেই বহু চর্চিত মামলায় প্রাক্তন বিচারপতি সহ চার বিচারপতি জানিয়েছিলেন ব্যক্তি স্বাধীনতার কোন সিলমোহর নেই। আর সেই যুক্তি কি খারিজ করে 2017 সালে বিচারপ্রতি চন্দ্রচুর জানান পূর্বে দেওয়া রায়ের মধ্যে খামতি ছিল। তিনি জানেন জীবন এবং ব্যক্তি স্বাধীনতার মৌলিক অধিকারের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তার সম্পূর্ণ দখল করতে পারে না দেশ। এছাড়াও ১৯৮৫ সালে প্রাক্তন বিচারপতি হুয়াই চন্দ্রচূড়ের বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ককে অসংবিধানিক বলা সেই রায়তেও দ্বিমত পোষণ করেন যশোবন্ত চন্দ্রচূড়।
আইনের দরবারে দাপুটে এই বিচারপতি ১৯৫৯ সালের ১১ই নভেম্বরে মুম্বাইয়ে একটি সচ্ছল পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন বাবা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হলেও আইন নিয়ে তেমন কোন আগ্রহ ছিল না বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের মা প্রভাদেবীর। বেশিরভাগ সময় শাস্ত্রীয় সংগীত নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকতেন তিনি। মুম্বাইয়ের ক্যাথিড্রোল এন্ড জন কোনন স্কুল থেকে পড়াশোনা শেষ করার পর দিল্লির সেন্ট কলম্বাস স্কুলে ভর্তি হন চন্দ্রচুর। এরপর দিল্লির সেন্ড স্টিফেন কলেজ থেকে অংক এবং অর্থনীতিতে স্নাতক হন কিন্তু পরবর্তীকালে দেশের বিচার ব্যবস্থা নিয়ে তিনি আগ্রহী হওয়ায় সেই নিয়েই পরবর্তী গবেষণা শুরু করেন। এরপর নিজে গুনেই সাফল্য অর্জন করেন যশোবন্ত চন্দ্রচূড়।