“Indian Education Framework needs to change completely.” ২০১৫ সালে দিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে এমনটাই মন্তব্য করেছিলেন ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালাম। সেই সঙ্গে তিনি আরও বলেছিলেন, কয়েক দশকের মধ্যে ভারতের কর্মসংস্থান যোগ্য দক্ষ কর্মী প্রয়োজন হবে এবং তার জন্য বদল করতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চ বিদ্যালয়ের সিলেবাস। ২০২২ এর ভারতে হয়তো সেই দিকেই মোড় ঘুরতে চলেছে অভিন্ন প্রবেশিকার মাধ্যমে।
দীর্ঘ দুই বছর ধরে চলা করোনার ভ্রুকুটি কাটিয়ে ফের ছন্দে ফিরছে জনজীবন, ছন্দে ফিরছে পঠন পাঠন। কম্পিউটার স্ক্রিন থেকে বেরিয়ে ফের খাতায়-কলমে শুরু হয়েছে স্কুল থেকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠন-পাঠন। তবে পরিবর্তন হয়েছে বেশকিছু ব্যবস্থার।
২০২০ সালে প্রকাশিত কেন্দ্রীয় শিক্ষানীতি বদলের সিদ্ধান্তে বেশ সমালোচনা হয় শিক্ষা মহলে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার শীলমোহর পড়লেও তার বাস্তবায়নের সূচি এখনও অস্পষ্ট। এর মাঝেই এবার বদল ঘটতে চলেছে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরে ভর্তি হওয়ার প্রবেশিকা পরীক্ষার নিয়মে। যা নিয়েও ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে বিতর্ক।
সম্প্রতি ইউজিসি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছেন এবার থেকে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরের ভর্তি প্রক্রিয়ার মাপকাঠি হবে একটি মাত্র অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষা। এই মর্মে চিঠি পাঠানো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্য সহ রাজ্যের বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষের কাছে। CUET- এর মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার ওপর আস্থা রেখে ইউজিসির চেয়ারপারসন জগদিশ কুমার বলেছেন, একটি পরীক্ষার ভিত্তিতে ভর্তি হলে পড়ুয়াদের নানান পরীক্ষার চাপ নিতে হবে না। দিতে হবে না একাধিক পরীক্ষা। এমনকি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি না হতে চাইলেও রাজ্য সরকারি বা বেসরকারি কলেজে ভর্তি হতে পারবে এই অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে। দ্বাদশ শ্রেণীর নম্বরের ভিত্তিতে কোন পড়ুয়াকে ভর্তি নেওয়া হবে না বলেও জানিয়েছে কমিশন। ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকেই এই নিয়ম চালু করতে চেয়ে পরীক্ষার নিয়ম নীতিও জানিয়ে দিয়েছে ইউজিসি।
বর্তমানে সারা দেশে ইউজিসি-র নিয়ন্ত্রণাধীন কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ৪৫টি। যার সবকটিতেই নয়া নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রবেশিকা পরীক্ষা নেওয়া হবে বলেই জানানো হয়েছে। জানা গিয়েছে NTA অর্থাৎ ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সিজ পাঠ্য বইয়ের ভিত্তিতে NCERT দ্বাদশ শ্রেণীর সিলেবাসে মাল্টিপেল চয়েস প্রশ্নের মাধ্যমে নেওয়া হবে পরীক্ষা । ভুল উত্তরের জন্য থাকবে নেগেটিভ মার্কিং। বাংলা, ইংরেজি , হিন্দি সহ মোট ১৩টি ভাষায় নেওয়া হবে পরীক্ষা। এপ্রিলের শুরু থেকেই রেজিস্ট্রেশান শুরুর নির্দেশ দেয় কমিশন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিজ্ঞপ্তি জারির পর থেকেই অভিজ্ঞ মহলে শুরু হয়েছে নানান বিতর্ক।
অভিন্ন প্রবেশিকার মাধ্যমে পড়ুয়াদের যোগ্যতা নির্ধারণে অভিনবত্ব থাকলেও এই নিয়ম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছে বলে মনে করছেন অভিজ্ঞদের একাংশ। তাঁদের মতে, একটি প্রবেশিকার নম্বরের ভিত্তিতে ভর্তি প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন বোর্ডের নম্বরের ভিতর অসাম্য দূর হবে একথা যেমন সত্য তেমনই এই প্রক্রিয়ায় নিজস্ব প্রতিষ্ঠান ছাত্র বাছাইয়ের অধিকার হারাবে বিশ্ববিদ্যালয় গুলি। বোর্ডের পরীক্ষার অসাম্য দূর করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বশাসনের অধিকারে হস্তক্ষেপ করা অন্যায় বলে মনে করছেন তারা।
অভিন্ন প্রবেশিকার ভর্তি প্রক্রিয়ায় আপাত ভাবে খর্ব হতে পারে দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষার গুরুত্ব। যদিও ইউজিসির দাবি, প্রবেশিকা পরীক্ষা হবে NCERT দ্বাদশ শ্রেণীর সিলেবাসের ভিত্তিতে, ফলে একই রকম গুরুত্বপূর্ণ থাকবে দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষা। কিন্তু এবার প্রশ্ন উঠছে সব বোর্ডে পড়ানো হয় না NCERT এর বই। মুলত সিবিএসই বোর্ডেই পড়ানো হয় সেই সিলেবাস। সেক্ষেত্রে অনান্য বোর্ডের পরীক্ষার্থীদের নিতে হবে আলাদা প্রস্তুতি। ফলে প্রবেশিকা পরিক্ষায় পাশ করতে পড়ুয়ারা দারস্ত হবে কোচিং সেন্টারের আর সেখানাই প্রকট হচ্ছে কোচিং ব্যবসা বৃদ্ধির।
তবে সব কিছুর উর্ধে যে প্রশ্ন বড় হয়ে দাঁড়াচ্ছে তা হল ইউজিসির এক তরফা ক্ষমতা আরোপ। সংবিধানের যৌথ তালিকা ভুক্ত বিষয় শিক্ষা, সেখানে রাজ্যের সঙ্গে পরামর্শ না করে সিধান্ত নেওয়া কার্যত অনৈতিক বলে মনে করছেন অনেকে।
ইউজিসি এর পরিবর্তিত নিয়ম আদৌ কতটা গ্রহণযোগ্য কতটাই বা সঠিক সেই নিয়ে বিতর্কের মাঝেই শুরু হয়ে গিয়েছে পরীক্ষায় বসার রেজিস্ট্রেশন। নিকট ভবিষ্যতে বড় কোনও পরিবর্তন না হলে চলতি বছরের জুলাইতে হবে CUET নিয়মে প্রবেশিকা পরীক্ষা।