জয়দীপ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত, দ্য একেন ছবি টিতে একাধিক টুইস্ট রয়েছে। সিরিজের তুলনায় ছবির গল্প আরও টানটান, আরও বেশি রহস্য – রোমাঞ্চে ভরা। অত্যন্ত জনপ্রিয় অভিনেতা অনির্বাণ চক্রবর্তী, চরিত্রে একেন্দ্র সেন ওরফে একেন বাবু ছোটোখাটো মধ্যবয়স্ক এক ভদ্রলোক, অপ্রত্যাশিত একজন সাদাসিধে আচরণের খাদ্যরসিক মানুষ, যিনি কৌতুকের সাথে সরল মনের ছবি তুলে ধরেন যা কখনও বা মজার আবার কখনও বা বিরক্ত ভরা। বাংলা সাহিত্যের লম্বা, ছিপছিপে, প্রখর বুদ্ধিদীপ্ত গোয়েন্দা দের ভিড়ে একেন বাবু অবশ্যই আলাদা, কিন্তু তিনি অনন্য। ও টি টি মাধ্যম ‘হইচই’ তে একেন বাবুর পরপর পাঁচটি সিজন জনপ্রিয় হওয়ার পরে এই প্রথম একেন বাবু বড়পর্দায় আত্মপ্রকাশ করলেন। একেন বাবুর নির্মাতা দের ভাবনা কোনো অংশে যে ভুল নয়, তার প্রমাণ নববর্ষের প্রায় হাউসফুল শো। এই পয়লা বৈশাখ যে সকলের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে তা বলাই বাহুল্য কারণ বাঙালী স্লেউথ একেন বাবু আমাদের হৃদয় ও মনকে রাজত্ব করতে যথেষ্ট ভাবে সক্ষম।
‘একেন বাবু’ সিরিজের গল্পের বুনন, উপস্থাপনা, সম্পাদনা — সবই দিনের পর দিন আরও দক্ষ হয়েছে। সুজন দাশগুপ্তের একটি গল্প অবলম্বনে গল্পের শুরু বাঁকুড়া র এক অধ্যাপক খুনের মধ্য দিয়ে। এবার একেন বাবু এবং তার দুই ঘনিষ্ঠ বন্ধু বাপি বাবু ওরফে সুহোত্র মুখোপাধ্যায় ও প্রমথ বাবু ওরফে সোমক ঘোষ – কে গল্প দার্জিলিংয়ের দোরগোড়ায় এনে উপস্থিত করিয়েছে। বিশেষত তাঁরা দার্জিলিং পাহাড়ের উদ্দেশ্যে রওনা হন একটি অপ্রীতিকর ছুটির সফরের জন্য। একেন বাবু এবং তাঁর সঙ্গীরা পথ পাড়ি দেন এক ভদ্রমহিলা, বিপাশা মিত্র ওরফে পায়েল সরকার এর সাথে। একটি অপ্রত্যাশিত অনুরোধ তার প্রান্ত থেকে একটি নিখোঁজ প্রাচীন মূর্তির তদন্তের জন্য আসে। গল্প ধীরে ধীরে ঘন হয় হত্যাকাণ্ডের পর। হোটেল মালিক দেবরাজ সিং ওরফে দেবাশিস মন্ডল একেন বাবু কে হত্যার তদন্তের জন্য নিয়োগ করেন এবং গোলকধাঁধা আরও জটিল হয়ে পড়ে। একেন বাবু এবং তার দল সত্য উন্মোচন করার জন্য তাদের ওডিসি শুরু করেন এবং অবশেষে খলনায়কেরা যায় কারাগারে র পিছনে।
পটভূমি দার্জিলিং হওয়ায় চিত্রগ্ৰহণের বিস্তর সুযোগ পেয়েছেন চিত্রগ্ৰাহক রম্যদীপ সাহা। রোদ ঝিকিমিকি কাঞ্চনজঙ্ঘা র উপস্থিতি, কুয়াশা, বৃষ্টির মাঝেই পাওয়া গেছে রহস্যময় গন্ধ। রহস্য যত জটিল হয়েছে, পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কুয়াশা, মেঘ, অন্ধকার, তার সাথে হাসিতে মজেছেন দর্শকেরা ও। আবার রহস্যের জট ছেড়ে যাওয়ার পর শেষ দৃশ্যে দেখা গিয়েছে তুলতুলে সাদা বরফ ও।
বরাবরই এই সিরিজের সিজন গুলি তে একেন বাবুর কীর্তি কলাপ যতটা যত্ন নিয়ে লেখা হয়, মূল রহস্যে তেমন জোর দেওয়া হয় না। এই ছবিও তার ব্যতিক্রম নয়। যদিও সিরিজের তুলনায় ছবির রহস্য অনেক বেশি আকর্ষণীয়, তবুও কিছু খটকা রয়েই যায়, থেকে যায় কিছু প্রশ্ন ও। ছবি দেখতে গিয়ে মনে হবে গল্পের বেশ কিছু অংশ ছুঁয়ে গিয়ে যেন শেষে আর ঘেঁটে দেখা হয়নি। ছবিতে হাসির দৃশ্য নিপুণ ভাবে লক্ষণীয় হলেও, অ্যাকশনের ভীত বেশ নড়বড়ে। তবে একেন বাবু ই প্রথম যিনি বাংলা কোনো সিরিজ কে পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ছবিতে রূপান্তরিত করতে সক্ষম হয়েছেন।