মানব সভ্যতার অত্যাধুনিকতার ভিড়ে মানুষের নজর এড়িয়েছে প্রকৃতির সুস্থতা। বিশ্বব্যাপী নতুনত্বের জাকজমকের মধ্যে প্রকৃতির ভালোমন্দ নিয়ে চিন্তার পরিসর যে সংকীর্ণ তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আর তারই ফলস্বরূপ প্রকৃতির তাণ্ডব এবং জলবায়ু পরিবর্তনের এই রীতি মানব সভ্যতাকে এক ভয়ানক ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিতে চলেছে। আধুনিকতা যত বাড়ছে তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে যানবাহন, কলকারখানা, এবং দৈনন্দিন জীবনে স্বচ্ছলতার চাহিদা। কিন্তু এসমস্ত ক্ষেত্রে জীবাশ্ম জ্বালানির বিপুল দহনে কার্বন নিঃসণের মাত্রাও মাত্রাও বাড়ছে দ্রুতগতিতে। এই নিয়ে বিশ্ব উত্তাল, আলোচনাও তুঙ্গে কিন্তু সমাধানের পথে আমরা অগ্রসর হচ্ছি কিনা সেখানে একটা প্রশ্নচিহ্ন থেকেই যায়।
তবে, উষ্ণায়ন, ক্লাইমেট চেঞ্জ, কার্বন নিঃসরণ এর জেরে পৃথিবী যে সংকটের সম্মুখীন তার সমাধানের পথে একজোট হয়েছে অনেক দেশই। যেমন বিশ্বের নিরিখে জনপ্রতি কার্বন নিঃসণের তালিকায় একেবারে উপরে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু গত তিন দশকের রেকর্ড ভাঙ্গা বুশফায়ার আর বন্যায় প্রবল চিন্তার মুখে পড়েছে অস্ট্রেলীয়বাসী। তাই জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে পুনর্বিকিরণ যোগ্য শক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশকে সমৃদ্ধ করার পন্থা অবলম্বন করেছে অস্ট্রেলিয়া।
এই কার্বন নিঃসরণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কুপ্রভাব থেকে রেহাই পায়নি এদেশও। রাজধানী দিল্লিতে দূষণের ভয়াবহতার কারণে স্কুল বন্ধেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের অন্যান্য বড় শহরের তুলনায় রাজধানীতে দূষণের পরিমাণ বরাবরই বেশি থাকে, এবং দীপাবলিতে সেই দূষণের পরিমাণ আরোও বেড়ে যায়। এবছর অক্টোবর মাস থেকেই আকাশ কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হতে দেখা যায়। এরই সাথে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশের কৃষকদের ফসলের গোড়া পোড়ানোর কারণেও বায়ুদূষণ চরমে পৌঁছোয়। সেই কারণেই বেশি দূষণ ছড়ায় এমন কলকারখানা গুলি বন্ধ করার পাশাপাশি কিছু ক্ষেত্রে ওয়ার্ক ফ্রম হোমেরও নির্দেশ দিয়েছে সরকার।
দেশে দূষণের এরূপ গতিপ্রকৃতির দিকে নজর রেখেই সম্প্রতি কার্বন নিঃসরণের মাত্রা শূন্যে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। শুধুমাত্র এদেশই নয়, মিশর, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, চীন সহ সমস্ত বড় দেশই প্রকৃতিকে সুস্থতা দেওয়ার পথে অগ্রসর হচ্ছে। তবে অন্যদিকে এও সত্যি যে দূষণের এই মর্মান্তিক তান্ডব কে বিনষ্ট করতে না পারলে মানব সভ্যতা এক অন্ধকার বাস্তবতার সামনে দাঁড়াবে, এবং সেই ধ্বংস লীলা থেকে কারো নিস্তার নেই।