মঙ্গলবার অর্থাৎ ৮য় মার্চ, বিশ্বের শ্রমজীবী নারী দিবসের বিশেষ দিনটিকে উদযাপন করতে বেহালা কলেজে অনুষ্ঠিত হলো বক্তৃতা (Elocution) ও বিতর্ক(debate) প্রতিযোগিতা। ২ বছর মহামারীর প্রকোপে এই প্রতিযোগিতা গুলো পড়ুয়াদের জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। এই প্রতিযোগিতা আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে প্রধান বিচারক তথা নিউ আলিপুর কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ডঃ অনিকেত মহাপাত্রের উপস্থিতিতে। প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল বিজ্ঞান, কলা বিভাগের বহু ছাত্র ছাত্রী। উপস্থিত ছিলেন বেহালা কলেজের অধ্যক্ষ মাননীয়া ডঃ শর্মিলা মিত্র ও কলেজের সকল অধ্যাপক ও অধ্যাপিকা। প্রতিযোগিতার সূচনায় বেহালা কলেজের অধ্যক্ষ মাননীয়া শর্মিলা মিত্র নিজের বক্তব্য নারী ও পুরুষের সমাজে অবদানকে সমান গুরুত্ব দিয়ে সমাজে সকল লিঙ্গের মানুষের মধ্যে ঐকতা প্রতিষ্ঠার গুরত্বপূর্ণ বার্তা দেন।
নারী দিবস উপলক্ষে প্রতিযোগিতার বিষয় ছিল “অর্থনৈতিক সমতা ও লিঙ্গ বৈষম্য “ও “ছেলেরা পড়বে বিজ্ঞান আর মেয়েরা পড়বে কলা “। অংশগ্রহণকারীরা নিজেরা নিজেদের বক্তব্য রাখার মাধ্যমে প্রধানত সমাজে পুরুষ ও নারীর কর্মক্ষেত্রে যে বৈষম্য সেটাকেই অর্থনীতির দিক দিয়ে তুলে ধরার চেষ্টা করলেন তাঁরা। যেমন, বেহালা কলেজের সাংবাদিকতা ও গণজ্ঞাপন বিভাগের ছাত্রী প্রিয়া আনন্দ একটি উল্লেকযোগ্য বক্তব্য তুলে ধরলেন- “ভারতবর্ষের মহিলারা এখনো নিজেদের ওপর পুরোপুরি আস্থা অর্জন করে উঠতে পারেনি, তাই দেশে মহিলা ব্যবসা উদ্যোক্তার গড় শুধু মাত্র ১৩%, যদিও এই গড় টাই সমাজের প্রত্যেকটা নারীর ভরসার অনুপ্রেরণা হয়ে উঠুক!। সাংবাদিকতা ও গণজ্ঞাপন বিভাগের অংশগ্রহণকারী আরেক ছাত্রী পৌলোমী বাগ তুলে ধরেন যে “ মহিলারা নিজেদের কর্মদক্ষতা অন্য খাতে ব্যয় করে! যেরকম চলতি দুনিয়ায় একটি শোনা নীতি “ফেমিনিজম” যেখানে মেয়েরা দাবি করে তাঁরা ছেলেদের মতো রাতে দেরি করে ফিরবে বা ধূমপান ও মদ্যপানে সমান দৃষ্টিভঙ্গি থাকা উচিত কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই ভাবেনা যে ছেলেদের মতোই কর্মক্ষেত্রে বা শিক্ষা ক্ষেত্রে সমান গুরুত্ব পাওয়া উচিত ! “
বাংলা বিভাগের ছাত্রী দেবলীনা পাণ্ডে বা রাজদীপ মণ্ডল তারাও সমাজে চলতি শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে পৃথকীকরণ বিরুদ্ধে সরব হয়ে নিজেদের মতামত ও যুক্তিসম্মত বক্তৃতা পেশ করেন!
বিতর্ক(Debate) প্রতিযোগিতায় ৪ জন করে পড়ুয়া নিয়ে দুটি দল গঠন করা হয় এবং “নারীদের রিজার্ভেশন, সাম্যতার প্রথম ধাপ ” – এই বিষয়ের পক্ষে ও বিপক্ষে বলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ হয়। ছাত্র অয়ন মাইতি যিনি পক্ষে নিজের বক্তব্য পেশ করেন,তাঁর মতে, নারীদের সমাজে অনেক ক্ষেত্রেই শোষিত হতে হয় এবং সমাজের অগ্রাধিকারের মূল ক্ষেত্র থেকে বঞ্চিত করা হয়! তাই, একটা আলাদা সংখ্যক জায়গা তাঁদের জন্য বরাদ্দ রাখা উচিত। এর মধ্যে বিপক্ষের দল থেকে উপাসনা দে যথেষ্ট প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরে দৃষ্টান্ত দেন, যে সমাজে রিজার্ভেশন হলো একটা শোষিত নিপীড়িত জাতির বা শ্রেণীর মানুষের জন্য! যা এখনও আমাদের দেশে বর্তমান । যতক্ষণ না এই শোষিত শ্রেণী সাম্য অর্জন করছে তাঁদের কে সরকার থেকে জায়গা বরাদ্দ করা উচিত। মহিলাদের জন্য আলাদা করে রিসার্ভেশন রাখা, সমাজে সাম্য অর্জনে একপ্রকার বাঁধা। উল্লেখ্য, সংশ্লিষ্ট বিষয়ের পক্ষে ও বিপক্ষে কলেজের অধ্যাপক ও অধ্যাপিকাও নিজেদের বক্তব্য পেশ করেন।
সর্বশেষে প্রতিযোগিতায় বিজেতাদের সার্টিফিকেট ও পুরস্কার প্রদান করেন “বেহালা কলেজের মহিলা সেল ডিপার্টমেন্ট” এর শ্রীমতি উজ্জয়িনী ঘোষ ও বেহালা কলেজের লাইব্রেরিয়ান শ্রীমতী অবন্তী চ্যাটার্জী। বক্তৃতায় প্রথম হন দেবলীনা পান্ডে, দ্বিতীয় পৌলোমী বাগ ও তৃতীয় রাজদীপ মন্ডল।
বিতর্ক বা ডিবেট এ জয়ী দল হিসেবে ঘোষণা করা হয় বিষয়ের বিপক্ষে বক্তব্য পেশ করা দলকে, সাথে “শ্রেষ্ঠ বক্তার” সম্মান দেওয়া হয় বিপক্ষ দলের ছাত্রী উপাসনা দে কে! প্রতিযোগিতার সমাপনি তে প্রধান বিচারক তথা ডঃ মহাপত্র নিজের বক্তব্যে নিউ আলিপুর কলেজে ও বেহালা কলেজের সংস্কৃতি ও তথ্য জ্ঞাপনের মেলবন্ধন জানিয়ে সকল অংশগ্রহণকারি ছাত্র ছাত্রীদের উজ্জীবিত করেন জীবনের আগামী প্রত্যেকতা পদক্ষেপে আরো দৃঢ় ভাবে লড়াই করার জন্য!