ফুকুশিমা পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে নির্গত তেজস্ক্রিয় জলীয় পদার্থ প্রশান্ত মহাসাগরে বিলিয়ে দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত জাপান ইতিমধ্যে নিয়েছে, বৃহস্পতিবার তারই তীব্র নিন্দায় সোচ্চার হলো উত্তর কোরিয়া ও চীন। দক্ষিণ কোরিয়া সরকার এই বিষয়ে কোন কটুক্তি না করলেও ফুকুশিমা অঞ্চলের সামুদ্রিক প্রাণী পণ্যের ওপর কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। গত তিন মাসের সমীক্ষা অনুযায়ী, জুলাইয়ে প্রায় ২৭ শতাংশ বেড়েছে নুনের দাম, কপালে চিন্তার ভাঁজ মাছ ব্যবসায়ীদের। দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী, সিউলের এক বাসিন্দা দাবি করেন,’যে হারে দেশে নুনের দাম বেড়ে চলেছে, এটিকে কালোবাজারি ছাড়া আর কিছুই বলা চলে না। তিন দিন পরপর আমি ফিরে গিয়েছি, বাজারে নুন নেই।’
২০১১ সালের ভূমিকম্পে জাপানের ফুকুশিমা পাওয়ার প্ল্যান্ট একটি ধ্বংসস্তূপ পরিনত হলে, সেটির অত্যাধুনিক যন্ত্রাবশেষ ঠান্ডা তথা নিশ্ক্রিয় করার উদ্দেশ্যেই এই জল ব্যবহার করা হয়েছিল। ফলস্বরূপ, এই তেজস্ক্রিয় জলে নানান রাসায়নিক পদার্থের সঙ্গে মিশে যায় ট্রিটিয়াম। বিজ্ঞানীরা দাবি,’হাইড্রোজেনের এই আইসোটোপ অতি সহজ পদ্ধতিতে জল থেকে আলাদা করা সম্ভব নয়। এরজন্য প্রয়োজন নানান অত্যাধুনিক কলকব্জা ও বিস্তর সময়।’ আর এখানেই উঠছে প্রশ্ন।
জাপান ইতিমধ্যেই পড়শি দেশগুলির সামনে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা – নিরীক্ষার নথিপত্র জমা করেছে। যদিও চীনের বক্তব্য,’বিশ্ব পরিবেশ নিয়ে চিন্তা করা প্রতিটি দেশের,ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর, প্রধান কর্তব্য। জাপান যে পদক্ষেপে উদ্দত হয়েছে, তা সামুদ্রিক জগতের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর বলেই মনে হয়। এ বিষয়ে আলাপ আলোচনার প্রয়োজন।’
দক্ষিণ কোরিয়ার মৌনতাকে “নিশি ভ্রমণ” বলেই মানতে আগ্রহী আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক মহল। ২০২৩ সালের শুরুতেই সে দেশের মৌলিক পারমাণবিক প্ল্যান্ট নিয়ে দন্দে জড়ায় উত্তর কোরিয়া। এ বিষয়ে কিম জং উন-এর দেশকে চীন সমর্থন করলেও, বাইডেন সরকার “ভুয়ো তথ্য” বলে বিষয়টি নাকচ করে দেয়। প্রসঙ্গত, গতকাল জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া দশ লক্ষ ডলারের একটি নগদ লেনদেন (CURRENCY SWAP DEAL) চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। যদিও তা কতোটা বাস্তবায়িত হবে, সেটাই দেখার। কিন্তু, প্রশ্ন হচ্ছে, এতো সমস্যার মাঝে নতুন চুক্তি, তাও অর্থনৈতিক, হয় কি করে? জাপানের এই সিদ্ধান্তে এখনও পর্যন্ত কোন মন্তব্য করতে দেখা যায়নি আমেরিকা ও ভারতের মতো পরিবেশ – সচেতন দেশগুলিকে।
কূটনৈতিক মহল থেকে কানাঘুষো শোনা যায়,’চীনের বিরুদ্ধে ভারত যে চাপা প্রতিদন্ধিতার দামামা বাজিয়ে দিয়েছে, তারই প্রতিফলন আমেরিকা, মিশর ও এবার দক্ষিণ কোরিয়া – জাপান। চীনা সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ায় মোদী সরকার “জোট-নীতি” অবলম্বন করতে সুপ্রচেস্ট।’
প্রসঙ্গত, দক্ষিণ কোরিয়ার মৎস উপমন্ত্রী সং সাং কিন-এর দাবি,’ দেশে লবণ ঘাটতিতে বর্তমান পরিবেশ ও নিম্নগামী উৎপাদনই মূল কারণ। জনস্বার্থে প্রতিদিন ৫০ টন লবণ কোষাগার থেকে বাজারদরের ২০% মূল্যহ্রাসে বিপণন করা হচ্ছে।’