Img 20230302 Wa0026

পড়ন্ত রোদের ছোঁয়া

পাখিরা বুঝি মাইনে পায়?

পাখিরা বুঝি মাইনে পায়?

মেঘেরা বুঝি অফিস যায় রোজ?

হাওয়ার বুঝি ব্যবসা আছে কোনো?

নদীরা বুঝি চুক্তি হলে, তবেই করে সমুদ্রের খোঁজ?

ঝর্ণা বুঝি বিকোয় কখনো?

 

দূরের দেশে শব্দ হয়

শব্দ ভেসে আসে

মুদ্রাহীন, সেই রঙিন…শব্দ ভেসে আসে

 

যেমন পাখি, যেমন নদী

যেমন মেঘ, সমুদ্র, হাওয়া

তেমনি কিছু মানুষ জানে

তাদের ডাক, শব্দ করে চাওয়া

মুদ্রাহীন, সেই রঙিন…শব্দ ভেসে আসে।

 

কবি শ্রীজাতর ‘পাখিরা বুঝি মাইনে পায়’ কবিতাটা হঠাৎ মাথায় এলো; আর আমরা স্কুল- কলেজের চার বন্ধু নিজেদের সব কাজ মাথায় তুলে, বশের বদলে সমুদ্রের গর্জন শুনতে, কাজ পাগল মানুষের পরিবর্তে হাওয়ার ছোটাছুটি খুঁজতে, দুঃসহ কলরব ছেড়ে পাখিদের কিচিরমিচিরে কানের আরাম পেতে, পরিবার নিয়ে ফেব্রুয়ারির শেষ দু’দিনের জন্য বেরিয়ে পড়লাম।

সোমবার (২৭/২) শিয়ালদহ থেকে সকাল ৭:১৪-র নামখানা লোকালে চেপে বসলাম বকখালি যাওয়ার উদ্দেশে। সকাল ১০টায় নামখানা স্টেশনে নেমে ম্যাজিক গাড়িতে করে এগারো জনের দল পৌঁছে গেলাম সেখান থেকে মোটামুটি ২৫ কিমি দূরে বকখালি ইকো পার্কে। তারজালি দিয়ে সবুজে ঘেরা অনেকটা জায়গা জুড়ে সমুদ্রের নিকট প্রতিবেশীর মতো গড়ে তোলা হয়েছে পার্ক। সেখানে রয়েছে ছ’টি এ.সি.তাবু (খাট সহ) ও খান দশেক সাধারণ জঙ্গল- তাবু (মাটিতে ম্যাট্রেস)। ট্রেন থেকে নেমেই সামান্য জলযোগ সেরে নিয়েছিলাম, তাই বেলা ১২টার আগেই ইকো পার্কে পৌঁছেই পড়িমড়ি করে সবাই দৌড়লাম জোয়ারে উন্মত্ত সমুদ্রের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়তে।

দুপুরের খাবার খেয়ে বেলা তিনটেয় দল বেঁধে দু’টো টোটোয় রওনা হলাম অন্যতম গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ ও পর্যটনকেন্দ্র, হেনরি আইল্যান্ডের দিকে। উনিশ শতকের এক ইউরোপীয় সাহেব সার্ভেয়ার হেনরির নামানুসারে সাদা বালির এই দ্বীপের নামকরণ হয়। শীতকালে এখানে পরিযায়ী পাখির ঝাঁক আসে।

সেখান থেকে এডওয়ার্ড সাহেবের নামে খাড়িতে বেনফিস বা ফ্রেজারগঞ্জ ফিশিং হারবার। সেখানে সারি সারি মাছের আড়ত আছে আর সারাদিন চলে ট্রলারের আনাগোনা। এখান থেকে মাছ প্যাকেজিং ও ফ্রিজিং হয়ে কলকাতা ডায়মন্ড হারবার ও হাওড়ার বাজারে চলে যায়। জম্বুদ্বীপ যাওয়ার জন্য এখান থেকে লঞ্চ ছাড়ে।

এরপর কারগিল বিচ। এখান থেকে খুব সুন্দর সূর্যাস্ত দেখা যায়। স্থানীয়দের মুখে প্রচলন আছে এই বিচে লোটে মাছ শুকোনো হতো এবং এই লোটে মাছ শুকানোর সময় এর দাঁত লেগে প্রায়ই হাত কেটে রক্ত পড়তো স্থানীয়দের। তাই কারগিলের রক্তপাতের সাথে মিল রেখে এই বিচের নাম এমন রাখা হয়।

এবারে ফ্রেজারগঞ্জ বিচ। শুরুতেই একটা ভাঙা দোতলা বাড়ি, স্থানীয় টোটো চালক যেটাকে ফ্রেজার সাহেবের বাড়ী বলে প্রচার করে। আসলে এটি একসময় পোর্ট ট্রাস্টের অফিস ছিল। পরদিন জম্বুদ্বীপ যাওয়ার সময় লঞ্চের ‘লালু মাঝি’র কাছে সে তথ্য পেলাম।

এদিনের শেষ দ্রষ্টব্য বকখালি বিচ। বকখালি বেড়াতে এলে সাধারণত এর কাছাকাছি হোটেলেই ওঠে সকলে। এর আগে আমার ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছিল। তখন অবশ্য ইকো পার্ক হয়নি, হোটেলও অনেক কম ছিল। এখন তো আনাচেকানাচে ছোট-বড়ো, সাধারণ অসাধারণ (!) নানা হোটেল; আরও হচ্ছে।

বকখালি বিচে ও তার সামনের রাস্তায় দোকানি পসরা সাজিয়ে বসেছে। আমরা কিছুটা সময় বিচে কাটিয়ে তাবুতে ফিরলাম। সেখানে বন-ফায়ার অনুষ্ঠানে আনন্দ করে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমের দেশে পাড়ি দিলাম।

পরদিন ভোরে পাখির কাকলিতে চোখ খুলে গেল। তাবু থেকে উঁকি দিয়ে দেখলাম, তখনও আকাশ আলোয় ভরেনি। সঙ্গীদের ডেকে তুললাম আর ম্যানেজারকে ডেকে গেট খুলে বেরিয়ে গেলাম সমুদ্রের ডাকে সাড়া দিতে।

পূর্ব দিকের হালকা সিঁদুর রঙ জানিয়ে দিচ্ছে, ‘তিনি’ আসছেন। এখান থেকে সৈকত (‘বিচ’ শব্দের কাছে এই শব্দটা প্রায় অপ্রচলিত) ধরে হাঁটলে বকখালি বিচে চলে যাওয়া যায়। অনেকটা পথ; আমরা অর্ধেক পথ গিয়ে ফিরে এলাম। ফেরার পথে, কচ্ছপের খোলের মতো একটা শক্ত আবরণের (দু’ভাগ করা) মধ্যে উল্টে থাকা অদ্ভুত এক জীব দেখে থমকে দাঁড়ালাম। তার লেজটা শক্ত ও ছুঁচালো, অনেকটা সজারুর কাঁটার মতো। বন্ধুদের বারণ সত্ত্বেও আমি তার লেজ ধরে নিয়ে গিয়ে কাছেই জল ভরা একটা গর্তে ছেড়ে দিলাম। সে তার হাত-পা চালিয়ে শরীরের নিচের বালি সরিয়ে স্বখাতে ঢুকে বালির সাথে মিশে গেল। শুধু তার লেজটাই দেখা গেল।

সরাসরি তাবুতে না ফিরে সবাইকে নিয়ে গেলাম রাস্তার ধারে এক চায়ের দোকানে। কারণ চায়ের দোকানে আড্ডার একটা অন্য কদর আছে। যা হোক, তাবুতে ফিরে দেরি না করে টোটো ধরে পৌঁছে গেলাম বেনফিস বা ফ্রেজারগঞ্জ ফিশিং হারবার। সেখান থেকে জম্বুদ্বীপ যাওয়ার লঞ্চ ছাড়ে। তবে কেবল সকাল ৮:৩০টায় লঞ্চ রিজার্ভ করার দরকার হয়না, জন প্রতি ভাড়া ১২০ টাকা। লঞ্চ বুক করতে যাত্রী সংখ্যা অনুসারে ৩০০০ বা ৫০০০ টাকা লাগে।

লঞ্চ এগিয়ে চলেছে, বাঁদিকে ডানদিকে সামনে বিভিন্ন দ্বীপের নাম, নামের কারণ ও সংক্ষিপ্ত ইতিহাস স্পষ্ট উচ্চারণে নিখুঁত বর্ণনা করে চলেছেন ৭২ বছর বয়সী অভিজ্ঞ লালু মাঝি, ইউটিউবেও যাঁর দেখা মেলে। তিনি এটাও জানালেন, কেন বর্তমানে জম্বুদ্বীপে পর্যটকদের নামতে দেওয়া হয় না। এখানে তা উল্লেখ করতেই পারতাম; কিন্তু আমি চাই, পাঠক তা ইউটিউবেই দেখে ও শুনে নিন। লঞ্চে তিনি একটা বাক্য কিংবা একটা শব্দও বোধহয় কম বা বেশি বলেননি।

তাবুতে ফিরে, স্নান খাওয়া সেরে ডানা মেলে দিলাম।

 

পাখি আবার ধরা দেবে চেনা সে খাঁচায়,

জীবন যেখানে তাকে হাসায়, কাঁদায়, নাচায়;

বাঁচে ও বাঁচায়।

Sounds Interesting? Share it now!

You May Also Like

👋Hello!

Guest User

 Terms of use | Privacy | Developer

Follow us on:

Notifications

Hi Guest User, here you'll get notifications about New Updates, Announcements & more...

Mobile Marketing Pana

Become A Social Media Manager!

LinkedIn reported that social media managers are the third most in-demand marketing position by posting volume in 2022. Learn, study & Acquire Practical Experience as a Social Media Manager & Get a Free Certificate!

Create✨

Oops...Sorry !

You have to Login to start creating on Youthesta.

Don’t have an account? Register Now

Not from Behala College but still Interested? Request