‘বাপি দা’ ওরফে ‘তাপস দাস’ সমস্ত যন্ত্রণা, লড়াই ভুলে বিলীন হলেন তারাদের দেশে। এক এক করে চলে গিয়েছেন ‘মহীনের ঘোড়াগুলির প্রতিষ্ঠাতা-শিল্পীরা। শেষ ঘোড়া ছিলেন তাপস দাস।গান পাগল সেই চিরসবুজ বাপির মৃত্যুতে শোক নয়, গানই হোক শেষ যাত্রার সাক্ষী, গানের মাধ্যমেই তাঁকে জানানো হয় শেষ বিদায়।
বাপি দা (তাপস দাস) ১৯৫৮ সালের ২২ সেপ্টেম্বর একটি সাধারণ বাঙালি পরিবারে নারায়ণ চন্দ্র দাস এবং জ্যোৎস্না দাসের চতুর্থ পুত্র হিসেবে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তার মা, জ্যোৎস্না দাসকে তার প্রথম গুরু বা শিক্ষক হিসাবে বিবেচনা করেন। ছোট থেকেই গড়ে ওঠেন সুরের জগতে। এবং বৈচিত্র্যময় সুরই ছিল তার পছন্দ। স্ব-শিক্ষিত গিটারবাদক বাপি, কলেজ জীবন থেকেই আরো অনেক বাদ্য যন্ত্রের সাথে বন্ধন গড়ে তোলেন।
৭০ – এর দশকে যখন বাঙালিরা মান্না দে, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গানে অভ্যস্ত ছিল,সেই সময়ে সাতজন যুবক কেউ কুড়ির কোঠায় তো কেউ পার করেছেন সেই সময়। গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের ( প্রয়াত) নেতৃত্বে – স্নেহের মানিক বা মনি দা নামে পরিচিত – ‘মোহিনের ঘোড়াগুলি’- র (মোহীনের ঘোড়া) জন্ম হয় দক্ষিণ কলকাতায় মানিকদার বাড়ির পিছনের উঠোনে যার নাম দিয়েছিলেন বেকার হাউস, তার ভাই প্রদীপ (বুলা) এবং বিশ্বনাথ (বিশু), তার চাচাতো ভাই (প্রয়াত) রঞ্জন ঘোষাল এবং বন্ধু তাপস দাস (বাপি), আব্রাহাম মজুমদার এবং তাপেশ বন্দোপাধ্যায় (ভানু)। সকলে একত্রিত হয়ে গড়ে তোলেন একটি দল। তাদের সংগীত প্রচেষ্টা বর্ণনা করার সময় ‘ব্যান্ড’ শব্দটি কখনই উষ্ণ হয় নি, নিজেদেরকে একটি সামাজিক-সাংস্কৃতিক ‘আন্দোলন’-এর সাথে তুলনা করতে বেছে নেয় যেটি তখনকার দিনে খুব কমই ব্যাপক স্বীকৃতি পায়।
আমেরিকান, লাতিন, রক, জ্যাজ, বাংলার বাউল আর কখনও কখনও শাস্ত্রীয় সংগীতের কিছু কিছু উপাদান সব রকম সঙ্গীতধারা মিলেমিশে যায় মহীনের ঘোড়ার ছন্দে-তালে-সুরে। যে-কারণে ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’কে অনেকেই লোক-রক ব্যান্ড বলেন।আর সেই থেকেই পথ চলা শুরু। আমার প্রিয়া কাফে’, ‘মানুষ চেনা যায় কি’, ‘কখন তোমার আসবে টেলিফোনে’র মতো সব গান সৃষ্টি করে গেছেন, আজও একই রকমভাবে জনপ্রিয় সেই সব গান।
তাপস দাস বছর দশেক আগে, স্ত্রী সুতপার উদ্যোগে মহীনের অপ্রকাশিত গানগুলি রেকর্ড করেছিলেন। গড়েছিলেন মহীন এখন ও বন্ধুরা। আবার বছর কুড়ি পরে যেভাবে মহীনকে নয়ের দশকে ফিরিয়ে এনেছিল, সেই সময়ের ছাপকে ফিরিয়ে আনার তাগিদ তাড়া করেছে তাপস দাসকে মৃতুয়ব্ধী পর্যন্ত। ৪৭ বছর পেরিয়েও এখনও একই রকম জনপ্রিয় এই ব্যান্ড।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বাপিদা’র ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার খবর সামনে আসে। গত ৬ মাস এই কর্কট রোগের সাথে যুদ্ধের পর হার মানলেন বাংলা ব্যান্ড দুনিয়ার পথিকৃৎ ‘মহীনের ঘোড়াগুলির’ আদি ঘোড়া ‘বাপিদা’ ওরফে তাপস দাস।