১৯৩৮,রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “গোপন কথাটি রবে না গোপনে ” গানের লাইনটি আলোড়ন জাগিয়েছিল বিশ্বাবাসীর মনে। ঠিক এক যুগ পরে ২০২১ সালে গানের লাইনটির যেন বাস্তবায়ন ঘটলো। সত্যিই আর গোপন কথাটি রইলো না গোপনে। গোপনীয়তার আন্তঃজাল ভেদ করে ব্যাক্তিগত তথ্য ফাঁস করার মতো কুরুচিকর কাজে নাম জড়ালো ইজরায়েলি সংস্থা NSO এর তৈরি স্পাইওয়্যার পেগাসাসের।
স্পাইওয়্যার পেগাসাসের নামের পিছনে রয়েছে এক বিস্তৃত ইতিহাস। গ্রিক পুরানের সাদা ধবধবে পক্ষিরাজ ঘোড়ার নাম ছিল পেগাসাস, যাকে ধরতে পারা বা বশে আনা কারোরই সহজ সাধ্য ছিল না। গ্রিক পুরানের পেগাসাস নামক সেই পক্ষিরাজ ঘোড়ার মতো এই পেগাসাস স্পাইওয়্যারকেও কেউ ধরতে পারে না, এমনকি ফরেন্সিক টেস্ট ছাড়া বোঝাই সম্ভব নয় মোবাইল পেগাসাসের আওতাধীন।
বর্তমান সময়ে প্রযুক্তি নির্ভরতার সাথে সাথে মোবাইল হয়ে উঠেছে মানুষের জীবনের অন্যতম সঙ্গী। এই মোবাইলকেই হাতিয়ার করে তার কর্মপ্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে ইজরায়েলি এই সংস্থা। কোনও লিংকের মাধ্যমে ফোনে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে এই স্পাইওয়্যার, মোবাইলের নিয়ন্ত্রণ চলে যাচ্ছে হ্যাকারদের কাছে, নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে ফোনের ক্যামেরাও। শুধু যে লিংক তা নয়, পেগাসাস ইন্সটল করতে ব্যাবহার করা হচ্ছে হোয়াটস্যাপ ভয়েস কল ও ভিডিও কলকেও।
ভারতে ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের আগে পেগাসাস স্পাইওয়্যারের অস্তিত্ব প্রথম লক্ষ্য করা গেলেও সেই সময় তা তেমন কোনও প্রভাব ফেলেনি। ২০২১ সালে নিউজ পোর্টাল দ্য আয়ারের একটি চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট এই ঘটনাকে আবার এনেছে জল্পনা তুঙ্গে ।জানা গেছে ৩০০ জন গুরুত্বপূর্ণ নাগরিকের ফোনে আড়ি পেতেছে পেগাসাস স্পাইওয়্যার। এই তালিকায় রয়েছে বহু তাবড়-তাবড় রাজনৈতিক ব্যাক্তি, সাংবাদিক, বিচারপতিদের নাম। এই তালিকায় নাম রয়েছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়,রাহুল গান্ধী, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের নামও।
স্বাধীনতার ৭৫তম বছরে দাঁড়িয়ে পেগাসাসের আগমন ভারতবর্ষের মানুষ যে কতটা স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে একপ্রকার। এমনকি ব্যাক্তিগত গোপনীয়তা অধিকার, মৌলিক অধিকার কতটা সুরক্ষিত তা নিয়েও রয়েছে সংশয়।