সম্প্রতি চলতে থাকা দাঙ্গা হাঙ্গামার কারণে ইতিমধ্যেই মণিপুরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে নানান প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সরবরাহ। গত ৩রা মে থেকে শুরু হওয়া এই অসন্তোষজনক পরিবেশে ঠিক কি উপায়ে জনসাধারণের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায় সামাজিক সেবা, এই নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার একটি তাৎক্ষণিক জরুরী বৈঠকের ডাক দিয়েছিল। ইতিমধ্যেই সেই বৈঠকের শেষে বেশ কয়েকটি নতুন পদক্ষেপের আশায় দেশের উত্তর – পুর্ব রাজ্য, মণিপুর।
ঝামেলার উৎস ঠিক কোথায়? কেনই বা লোকসভা নির্বাচনের আগেই উত্তাল মণিপুর?
আগা গোড়া ভাগ করলে, এই রাজ্যের বাসিন্দাদের দু’ভাগে ভাগ করা সম্ভব – পাহাড়ী গোষ্ঠী ও সমতল গোষ্ঠী। এই সমতল গোষ্ঠীদেরই আর এক নাম মইতেই। ৮ – ১০% ভূমিতে বসবাস করা রাজ্যের ৫১% বাসিন্দাদের দাবি, সিডিউল্ড ট্রাইবে (ST) তাদের নাম নথিভুক্ত করতে হবে। শুধু মুখের কথাই নয়, সিডিউল্ড ট্রাইব ডিমান্ড কমিটি ওফ মণিপুরের (STDCM) উদ্দোগে ২০১২ সালে তৎকালীন রাজ্যপাল গুরবচন সিং জগৎ ও তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ওকরান ইববি সিং- এর দারস্থ হন তারা এবং একটি মেমোরেন্ডামও জমা করেন। রাজ্য সরকার কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় মইতেই গোষ্ঠি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। তাদের দাবি, গত দশ বছরে, মইতেই জনসংখ্যা ৫০% থেকে কমে ৪০% নিম্নগামী এবং রাজ্যের অতি সামান্য কিছু অংশ অধিগ্রহণ করার দরুন নিরাপত্তাহীনতা জাঁকিয়ে বসেছে।’ ২০১৩ সালে, মণিপুর হাইকোর্ট একটি পরোয়ানা জারি করে জানায়, এই গোষ্ঠির বক্তব্য শুনে তৎকালীন রাজ্য সরকার কোনরকম পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ। মইতেই গোষ্ঠির আরও দাবি, ইংরেজ আমলের পূর্বে, ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত, তারা দেশের পিছিয়ে পড়া দলগুলিল মধ্যেই গণ্য হতো। তবে এখন কেন নয়?
২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে নির্বাচনের কারণ দেখিয়ে নাকচ করে দেওয়া হয়। ২০২১ সালে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে মোর্চা বের হলেও কোন ফল হয় না। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, সংবিধানের ৩৪২ ধারা অনুযায়ী ভারতবর্ষের রাস্ট্রপতির কাছেই পরোয়ানা জারি করে যে কোন গোষ্ঠীকে পিছিয়ে পড়া দলগুলির তালিকায় নথিভুক্ত করার ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু, রাস্ট্রপতির কলম অবধি পৌঁছনোর আগেও লম্বা একটা বারান্দাপথ হাঁটতে হয়। ১৯৬৫ লোকুর কমিটি অনুযায়ী বেশ কিছু বিভাগে টিক চিহ্ন পড়লে তবেই রাস্ট্রপতি কেবিনেটে আলোচনা শুরু করতে পারেন। একটি ভূতাত্ত্বিক ও অর্থনৈতিক সমীক্ষা তৈরি করে কেন্দ্রের কাছে পাঠানোর দায়িত্ব রাজ্যের। তারপর এই সমীক্ষা ট্রাইবেল মন্ত্রালয় থেকে ঘুরে অফিস ওব রেজিস্ট্রার জেনারেল ওব ইন্ডিয়া (ORGI) হয়ে পৌঁছয় ন্যাশানাল কমিশনের কাছে। সবশেষে রাস্ট্রপতির পরোয়ানা এবং পার্লামেন্টের তালিকা সংশোধন।
মজার বিষয়, এতো “না-থাকার” মধ্যেও মণিপুরের ৬০ খানা আসনের ৪০ খানাই মইতেই গোষ্ঠির দখলে। এখন প্রশ্ন, রাজ্য সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে।