গত বৃহস্পতিবার জি২০ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনায় বসে ভারতবর্ষ প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নিয়ে বাড়তি উদ্যোগ দেখিয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আমেরিকা থেকে ভিডিও বার্তায় বলেন,’বর্তমান যুগে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। লোভ – লালসাকে দূরে ঠেলে আমাদের নৈতিক হওয়ার সময় এসেছে।’
এই ‘প্রযুক্তি’ নিয়ে কথা বললে, যে বিষয়টা ইতিমধ্যেই দেশের মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত সমাজে ত্রাশ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা হলো আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অথবা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। গবেষণা পত্র থেকে শুরু করে যানচলাচল, এমনকি পৃথিবীর উন্নত দেশগুলিতে ‘রেডিমেড হাউসের’ একটা প্রচলনও ইতিমধ্যেই শোরগোলের একটা কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইট, বালি, সিমেন্ট – সমস্ত কিছু জোগাড় করে দিলেই বাকি কাজ এই অতিমানবিক কৃত্রিম শক্তি অনায়াসে হাসিল করে সামনে সাজিয়ে দেবে। ম্যাক্রোইকোনোমিক কন্ডিশন অর্থাৎ বিশ্ব শ্রম স্বচ্ছলতা যে নিম্নগামী তা বহুজাতিক নামী সংস্থাগুলোর ছাঁটাই পর্ব থেকেই পরিস্কার। যে বাক্যটা নিয়ে একসময় সস্তির হাঁফ ছাড়তেন যুব সমাজ, সেটাই এখন যেন বোয়াল মাছের কাঁটা – চাকরিতে ‘সিকিওরিটি’ আছে কি?
শান্ত স্বভাবে চিন্তা করলেই একটা প্রশ্ন মাথায় আসে – সিকিউরিটি মানে কি? নিজ দক্ষতা বৃদ্ধি করে নিজের তথা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে যোগদান করা নাকি সপ্তাহে চারটে ছুটি চেয়ে অত্যন্ত সামান্য কিছু অর্থের বিনিময়ে তাপনিয়ণত্রিত ঘেরাটোপে বসে থাকা? তবে হ্যাঁ, যুক্তি দেওয়া যেতেই পারে, অর্থ যদি বিনামূল্যে মেলে, তাহলে বিদ্যুৎ বিল নিয়ে তর্ক না করার কি আছে? ঘরে বসে টাকা, সময় তো দেদার ফাঁকা! তাই না!
কর্ম নেই, এ কথা বলা ভুল। যদি তাই হতো, তাহলে বর্তমান শ্রম নিয়োগ সমীক্ষা (LSPR) অনুযায়ী ২.২৫ লক্ষ চাকরিতে মেরে কেটে এক লক্ষ নিয়োগ সম্ভব হতো না। আইটি সেক্টরগুলি যেখানে দক্ষ কর্মীর খোঁজে হয়রান, তখন নানান বিদেশি বিনিয়োগকারী সংস্থারাও বর্তমানে এ দেশে বিনিয়োগ থেকে পিছু হটছে। সৌদি আরব তেলের উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে, রাশিয়া – ইউক্রেন নিয়ে চাপানউতোর তো রয়েইছে।
গুগলের মতে, ভারতে কর্মসংস্থান তো রয়েছে, যা নেই, তা কর্মদক্ষতা। আর ঠিক এই কারণেই গত বৃহস্পতিবার নরেন্দ্র মোদী স্কিল ম্যাপিং এর উল্লেখ করেন। ন্যাশনাল কেরিয়ার সার্ভিস (NCS), দীন দয়াল উপাধ্যায় গ্রামীণ কৌশল যোজনা, প্রধানমন্ত্রী স্বাধীন প্রকল্প তো রয়েছেই। উপরন্তু, এখন প্রতিটি রাজ্যের প্রতিটি জেলায় তৈরি হচ্ছে গ্রামীণ স্বনির্ভর কর্ম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (Rural Self-employment and training institute)। দেশ এগিয়ে আসছে, বিভিন্ন ব্যাঙ্ক রাজ্যের সাথে হাতে হাত মিলিয়েছে, জি২০ আলোচনাসভার ফল হেতু হয়তো আরও কিছু উন্নত প্রকল্প সামনে আসবে আগামী দিনে । কিন্তু, প্রশ্নটা হচ্ছে – কাদের জন্য? তারা জানে তো?