ইসলামি পরিভাষায় ”হজ” সৌদি আরবের পবিত্র শহর মক্কায় অবস্থিত “ঈশ্বরের ঘর” কাবার উদ্দেশ্যে করা একটি তীর্থযাত্রা ।এতদিন মেয়েদের মক্কায় হজ করতে যেতে হলে সঙ্গে একজন পুরুষ অভিভাবককে সাথে নিতেই হত। কিন্তু সেই নিয়ম আর লাগু রাখল না সৌদি আরব। যখন ইরান পুড়ছে মেয়েদের স্বাধীনতার প্রশ্নে—হিজাব-বিতর্কে সে দেশে চলছে গুলি, হচ্ছে প্রাণসংশয় এবং ভারতে ক্রমশ বেড়ে-চলা হিজাব-সংক্রান্ত বিতর্ক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাবে ‘হ্যাঁ’, নাকি ‘না’। আর এরই ফাঁকে সৌদি আরব সমস্ত গোঁড়ামিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মেয়েদের স্বাধীন ধর্মাচরণকে স্বীকৃতি প্রদান করল। সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াধ থেকে যুগান্তকারী ঘোষণার মাধ্যমে জানানো হলো , মেয়েরা এবার ‘মেহরাম’ বা পুরুষ অভিভাবক ছাড়াই মক্কায় হজ করতে যেতে পারবেন, হতে পারবেন হাজি বা উমরাহ।
পবিত্র কোরানে হিজাবের উল্লেখ রয়েছে। তা মানা মুসলমান নারীদের কর্তব্য। এ বিষয়ে যেকোনো রকমের বিধিনিষেধ মুসলমান নারীদের চেতনা ও আচরণগত গোপনীয়তার অধিকার খর্ব করে। ভারতে ক্রমশ বেড়ে-চলা হিজাব-সংক্রান্ত বিতর্ক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাবে ‘হ্যাঁ’, নাকি ‘না’—নানা অভিমুখে ছড়িয়ে পড়ছে।এই নিয়ে হিজাব মামলায় ভিন্ন রায় দিলেন সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি। হিজাব মামলায় কর্নাটক হাইকোর্টের রায়কে ঠিক বললেন বিচারপতি হেমন্ত গুপ্ত। অন্য দিকে, কর্নাটক হাইকোর্টের রায়কে খারিজ করলেন বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া। কর্নাটক সরকারের হিজাব পরার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা খারিজ করে দেন তিনি। সব মিলিয়ে ভারতে হিজাব বিতর্কে যোগ হল আরও এক নতুন মাত্রা।
মধ্য প্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলির মধ্যে অন্যতম সৌদি আরব। অন্যান্য মুসলিম দেশের তুলনায় নারী স্বাধীনতার প্রশ্নে সৌদি আরব প্রশাসন যে অনেকটাই এগিয়েছে, তা মানেন বহু সমালোচকও। ১৯৫৫-এ এদেশে প্রথম প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে মেয়েদের জন্য খোলা হয় স্কুল। ১৯৭০-এ মেয়েদের জন্য সৌদিতে উচ্চশিক্ষার জন্য খোলা হয় বিশ্ববিদ্যালয়। ২০০১-এ এখানকার মেয়েদের পরিচয় পত্র দেওয়া হয়। জোর করে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া বন্ধ করতে ২০০৫-এ আইন পাস করে সৌদি আরব প্রশাসন। এর পর ২০১৫-য় ভোট দেওয়ার অধিকার এবং ২০১৮-য় গাড়ি চালানোর লাইসেন্সও প্রদান করা হয়। এরপর 2022 সালে মেয়েদের স্বাধীন ধর্মাচরণের স্বীকৃতি। অবশ্য এটি খুব সহজেই হল না। এই নিয়ে বহু দিনের বিতর্ক ছিল মুসলিম ধর্মতাত্ত্বিকদের মধ্যে। মুসলিম ধর্মতাত্ত্বিকেরা এটা নিয়ে বহুদিন থেকে দু’ভাগে বিভক্ত। একদল ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতেই ইচ্ছুক ছিল, অন্য দল চেয়েছিল যুগের সাথে বদল আসুক। অবশেষে সময়ের দাবিকেই মান্যতা দিয়ে মেয়েদের স্বাধীন ধর্মচরণকে স্বীকৃতি দিল সৌদি আরব।