ছোটবেলা থেকেই ইতিহাসের প্রতি একটা আলাদা টান ছিল রাজার । বর্তমানে কর্মসূত্রে তাই মুর্শিদাবাদের একটি গ্রামে , স্কুলের ইতিহাস শিক্ষক হিসাবে দৈনন্দিন “কলকাতা টু মুর্শিদাবাদ” যাওয়া – আসাটা বেজায় মন্দ ছিল না । আসলে শহরের বাতাসের থেকে সবুজ ঘেরা গ্রামের মুক্ত বাতাসে যেনো একটা মুগ্ধতা আছে । শুধু এই পচা গরমে একটু কষ্ট হলেও সাড়ে ৩ ঘণ্টার ট্রেন জার্নিটা বেশ উপভোগ করতো রাজা । এইভাবে কর্মজীবনের প্রায় দেড় বছর কাটানোর পর এক বিকালে স্কুল ছুটির পর প্রবল বর্ষণের জন্য রাজা আটকে পড়ে স্কুলেই । সন্ধ্যা পেড়িয়ে রাত হতে যায় কিন্তু বৃষ্টির বিন্দুমাত্র প্রাবল্য কমে না । অবেশেষে কোনরকম ভাবে আধভেজা অবস্থায় সামনের রিক্সা স্ট্যান্ডে এসে দাঁড়ায় রাজা , কিন্তু একি ?? “একটাও রিক্সা নেই , শেষ ট্রেনটাও বোধহয় গেলো এবার !” এই ভাবতে ভাবতে রাজা আবার স্কুলেই ফিরে আসে । যে সবুজ গ্রামে রাজা রোজ মুক্ত বাতাস আর ইতিহাস পড়ানোর জন্য আসতে ভালোবাসতো , সেই গ্রামই এখন রাজার কাছে বিরক্তিকর হয়ে উঠেছিল । চারিদিক অন্ধকার , কেউ নেই , শুধু বৃষ্টির আওয়াজ কানে তীক্ষ্ণ আঘাত করছে ।
হঠাৎ ওটা কি !! অন্ধকারের মধ্যে রাস্তা দিয়ে একটা রিক্সা আসছে । কিছু না ভেবেই দৌড় মারলো রাজা । রিক্সায় বসে স্টেশনের দিকে রওনা দিলো । অন্ধকারের মধ্যে এগিয়ে চললো রিক্সা কিন্তু হঠাৎ গিয়ে দাড়ালো এক রাজবাড়ীর সামনে কিছু বুঝে ওঠার আগেই সিপাহীরা ধরে নিয়ে গেলো রাজদরবারে । সিংহাসনে বসা চেহারাটা চেনা চেনা লাগলো রাজার । কিন্তু পড়নে শার্ট আর প্যান্ট দেখে ব্রিটিশ সরকারের গুপ্তচর ভেবে নবাব আদেশ দিলেন রাজাকে কারারুদ্ধ করার । নির্দোষ রাজা কারাগারে বসে ভাবতে থাকে স্টেশন যেতে গিয়ে সে এখানে কিভাবে এসে পড়লো আর এই গয়না , মুকুট পড়ে বসে থাকা নবাব কোথা থেকে এই যুগে উদয় হলো । ইতিহাস নিয়ে চর্চা থাকলেও সব কেমন এ যুগে বেমানান লাগছিল রাজার । তখনই সভাসদগণের চিৎকার ” নওয়াব সিরাজউদৌলার জয় হোক” ।
কারারুদ্ধ রাজার কাছে এখন সব কিছুই যেনো ধোঁয়াশা মনে হলো । কিন্তু নবাবের তেজ দেখে সে অনুমান করতে পারছিল যে , সে বোধহয় স্টেশন যাওয়ার বদলে সত্যিই নবাবের সাম্রাজ্যে এসে পড়েছে । কিন্তু মগজে তখনই এক বিশেষ বুদ্ধির আগমন ঘটে রাজার । পরবর্তীকালে কি ঘটবে নবাবের সাথে তার সব কিছুই জানা , যদি সে নবাবকে মীরজাফরের ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে বলে দেয় তাহলে সে নতুন “ইতিহাস” তৈরি করতে পারবে ।
নবাবের সামনে তাই নিজেকে পেশ করে রাজা । গোটা ঘটনা বলে , কিন্তু একি নবাব তার মন্ত্রীর ব্যাপারে গদ্দারির কথা শুনে নারাজ হয়ে প্রচন্ড রেগে যান এবং মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দান করেন রাজার বিরুদ্ধে । জীবনের শেষ দিনটা যে এইভাবে ভালো কাজ করতে গিয়ে চলে আসবে রাজা ভাবতেই পারেনি । জল্লাদ আসে রাজাকে নিয়ে যাওয়া হয় , “ঘ্যাচাং ফু!!!!”
হঠাৎ “ও স্যার, ও স্যার” শব্দে ঘুম ভেঙে যায় রাজার ।
হ্যাঁ এটা স্বপ্ন ছিল রাজার কিন্তু সেই রিক্সা ? রিক্সা তো রাজা ধরেছিল এটা সত্যি , তাও যেনো মন মানতে চায় না রাজার । সময়ের সাথে পাল্লা দিতে গিয়ে রাজা হারিয়ে গিয়েছিলো ইতিহাসে , তাই নেহাত “ভ্রম” বলে উড়িয়ে দিয়ে আবার ছাত্রদের “পলাশীর যুদ্ধ” পড়ানোতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে রাজা ।