বিগত কয়েক মাস ধরে আতঙ্কের সাথে সহবাস ইউক্রেনের – রাশিয়ার সাথে যুদ্ধে ইউক্রেনের পূর্ব ও দক্ষিণ অংশ প্রায় শ্মশানে পরিণত হয়েছে। এমত, অবস্থায় রাশিয়ার পরবর্তী পরিকল্পনা ঠিক কি হতে পারে এই নিয়ে ইউক্রেনের বাকি বাসিন্দারা ভয়ে জীবন অতিবাহিত করছে। আসন্ন শীতে বরফে ডেকে যাবে পুরো ইউক্রেন। ইউক্রেনবাসীদের হাতে শক্ত করে চেপে ধরা হাতিয়ার চুপিসারে কেড়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে রাশিয়া। বিদ্যুৎ ছাড়া জীবন অতিবাহিত করা প্রায় অসম্ভব। ইতিমধ্যেই ইউক্রেনের ৪০ শতাংশ পাওয়ারগ্রিড প্রায় ধ্বংসের পথে , তার ওপর আবার বাকি পাওয়ার গ্রিডগুলিতে হামলা শুরু করেছে রাশিয়া। তবে কি নতুন কোনো হামলার পরিকল্পনা করছে রাশিয়া? শোনা যাচ্ছে, মস্কোর পরবর্তী নিশানা হতে পারে একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প লাগোয়া জলাধার, এমনটাই জানালেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এই ষড়যন্ত্রের ওপর ভিত্তি করেই ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়াকে সতর্ক বার্তাও দিয়েছেন যে যদি এই কাজ রাশিয়া করে থাকে , তা বড়সড় বিপর্যয় ডেকে আনবে।
গতকাল গভীর রাতে সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি দাবি করেন যে, নিপ্রো নদীতে মাইন ফেলেছে রুশ বাহিনী। তাদের পরবর্তী লক্ষ্য নাকি নিপ্রো নদীর উপরে কাখোভকা ড্যাম। যদিও জলধারাটি রয়েছে রুশ নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে ,কিন্তু ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেনের দিকে। কাখোভকা ড্যাম মস্কোর হাত থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ছে। জেলেনস্কির দাবি, তার জন্যই পাল্টা কৌশল করেছে ক্রেমলিন। উল্টে তারা অভিযোগ করেছে, কাখোভকা ড্যামকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছে কিভের সেনা। জেলেনস্কি আরও বলেছেন যে, এই জলাধার যদি কোনও ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা হলে দেশের দক্ষিণ অংশে জলসবরাহ প্রায় বন্ধ হয়ে যাবে। আর এর ফলে আরও গুরুতরভাবে ক্ষতিগস্ত্র হবে পড়বে ইউক্রেন। এই জলাধারে যে পরিমাণ জল ধরে, যদি সেটিকে বিস্ফোরণের দ্বারা নিঃশেষ করে দেওয়া হলে খেরসন-সহ ৮০টি এলাকা জলের তলায় চলে যাবে। এটি ভয়াবহ বন্যার আকার ধারণ করবে। হাজার হাজার মানুষ অসহায় হয়ে পড়বে। এ ছাড়াও নর্থ ক্রাইমিয়ান ক্যানাল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাবে। তাতে জলহীন হয়ে যাবে ক্রাইমিয়া।কারণ, ক্রাইমিয়ার ৮০ শতাংশ জল সরবরাহ হয় এই ক্যানালের মধ্য দিয়েই।
খেরসনে কাখোভকা ড্যাম রাশিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ , এর কারণ হল নিপ্রো নদীর চারপাশের অঞ্চলে পৌঁছনোর জন্য এই জলাধারটিই একমাত্র পথ খোলা রয়েছে তাদের জন্য। যদিও রাশিয়া এই কাজ করেছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। রাশিয়ার ওপর করা ইউক্রেনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রাশিয়ার নিযুক্ত খেরসন প্রশাসন। উল্টে আবার তারা ইউক্রেনের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ তুলেছে। তাদের দাবি, অ্যান্টোনিভস্কি সেতুতে ইউক্রেনের হামলার ফলে সেখানে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, তার মধ্যে আবার এক জন একটি টিভি চ্যানেলের প্রধান ছিলেন। যদিও রাশিয়ার দাবি, ইউক্রেনের হামলার জেরে খেরসন থেকে তারা লোকজন সরিয়ে নিচ্ছে। এই স্থানান্তর করা লোকজনের মধ্যে রয়েছে রুশ প্রশাসনের কর্তারা এবং সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারাও রয়েছেন।