প্রায় এক বছরের হতে চলল রাশিয়া ও ইউক্রেনের সেই ভয়াবহ যুদ্ধের। গত ফেব্রুয়ারি মাসেই এই যুদ্ধের সূত্রপাত করেছিল ভ্লাদিমির পুতিনের রাশিয়া। তবে গত এক মাস যাবত কিছুটা শান্ত ছিল যুদ্ধক্ষেত্র। যদিও যুদ্ধের গর্জন বেশি শোনা গিয়েছিল জি-টোয়েন্টি সহ নানা বৈঠকে আজ ফের ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কেঁপে উঠল ইউক্রেনের বিভিন্ন প্রান্ত। কিভ জানিয়েছে যে, মোট ৮১টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে মস্কোর বাহিনী। এর মধ্যে ৩৪ টা ক্ষেপণাস্ত ধ্বংস করেছে ট্রেনের বায়ু সেনা। চারটি বিস্ফোরকবাহী ড্রোন গুলিতে করেই সেখান থেকে নামিয়েছে তারা।
আজ নিশানায় ছিল ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহর। একদিকে রাজধানী কিভ এবং অন্যদিকে পূর্ব ইউক্রেনের বাখমুট থেকে দক্ষিণের বন্দর শহর ওডেসা অপূর্ব থেকে একেবারে পশ্চিম পোল্যান্ড ঘাসা শহর লিভিং পর পর একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বিধ্বস্ত গোটা দেশ। সেখানে নিহত হয়েছেন অন্তত ন’জন। তবে এখনো পর্যন্ত আহত কতজন হয়েছে তার সংখ্যা ও অগুনতি। সেখানকার বিদ্যুতের পরিকাঠামো গুলো প্রায় ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে জাপরিজিয়া পরমাণু কেন্দ্র। এসব অঞ্চলে হামলা নিয়ে তাই বারবার রাশিয়াকে সতর্ক করা হয়েছে। এতটুকু ভুলে ঘটে যেতে পারে পরমাণু বিপর্যয়। সে ক্ষেত্রে গোটা ইউরোপ ধ্বংস হয়ে যাবে। ইউক্রেনের পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘এনারগোতোম’ আজ জানিয়েছে, জাপোরিজিয়া পরমাণু শক্তি কেন্দ্রের শেষ যে বিদ্যুতিন লাইনটি সক্রিয় ছিল, সেটিও রকেট হানায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এই নিয়ে ষষ্ঠ বার এই ঘটনা ঘটল। ইউক্রেনের বিদ্যুৎ গ্রিড থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে পরমাণু কেন্দ্রটি। এ পর্যন্ত যত বার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে, ডিজেল জেনারেটরের সাহায্যে চুল্লিকে ঠান্ডা রাখার ব্যবস্থাটি সক্রিয় করে রাখা হয়েছে।
রাষ্ট্রপুঞ্জের পরমাণু বিষয়ক নজরদারি বিভাগের প্রধান রাফায়েল গ্লোসি ফের রাশিয়া ও ইউক্রেনের কাছে আর্জি জানান, জাপোরিজিয়াকে অবিলম্বে নিরস্ত্রীকরণ করা হোক। তিনি বলেন যে আমি “অবাক হয়ে যাচ্ছি, এমন একটা বিপজ্জনক জায়গায় কী ভাবে যুদ্ধ চলছে।” “ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি’ জানুয়ারি মাসে জানিয়েছিল, পরমাণু বিপর্যয় যাতে না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে তারা নিয়মিত ভাবে জাপোরিজিয়া পরমাণু কেন্দ্রটির উপরে নজর রাখবে। কিন্তু ক্রমাগত রুশ হামলায় তা-ও অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
নিপ্রো শহরে অবস্থা ভয়াবক। সারা রাত ধরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চলেছে এখানে। রুশ হামলার পরে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন যে, এটি খুব কঠিন একটা রাত ছিল। কিভ, কিরোবোরাদ, নিপ্রো, ওডেসা, খারকিভ, জাপোরিজিয়া, লিভিভ-সহ বহু অঞ্চল আক্রান্ত। গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো ও একাধিক আবাসন ক্ষতিগ্রস্ত। অনেকে জখম ও মৃত আমেরিকার প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের এক কর্তা এ দিনের হামলায় ইরানের নামও টেনেছেন। তিনি বলেন, ইরানের যুদ্ধ-গবেষণাগার হয়ে উঠেছে ইউক্রেন। পশ্চিম এশিয়ার বাইরে নিজেদের তৈরি অস্ত্র পরীক্ষা করছে তারা।