আর তিন নয়, এবার থেকে চার বছরের পঠন-পাঠনের পর মিলবে স্নাতক ডিগ্রি। চলতি বছর অর্থাৎ ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকেই শুরু হবে নতুন পাঠ্যক্রম। সাংবাদিক বৈঠকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই নির্দেশিকা জারি করলো রাজ্য শিক্ষা দফতর। বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকেই রাজ্যের সরকারি, সরকার পোষিত এবং সরকারি সাহায্য প্রাপ্ত উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলিতে চার বছরের স্নাতক পাঠ্যক্রম চালু হবে।মূলত পড়ুয়াদের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত বলে উল্লেখ করে শিক্ষা দফতর। পাঠ্যক্রমের এই বদলের ফলে পড়ুয়াদের সর্বভারতীয় প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে সুবিধা এবং বাইরের রাজ্য পড়তে চলে যাওয়ার প্রবণতা কমবে বলে উল্লেখ করেন শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু।
চলতি বছরেই শিক্ষানীতির একাধিক পরিবর্তনের প্রস্তাব রাখে কেন্দ্র। সেই শিক্ষানীতির বিরোধিতা করে রাজ্য সরকার। জাতীয় সেই শিক্ষানীতি বিশ্লেষণ করার জন্যে ছয় সদস্যের বিশেষ কমিটিও গঠন করে রাজ্য। আর সেই কমিটির অনুমোদনের পরই চার বছরের স্নাতক স্তরে পঠন-পাঠনের প্রক্রিয়ায় শিলমোহর দিল রাজ্য। তবে এখনই কেন্দ্রীয় ভাবে ভর্তি প্রক্রিয়া চালু করতে নারাজ রাজ্য। আপাততঃ কলেজের অনলাইন প্রক্রিয়ার অর্থাৎ আগের নিয়মেই ভর্তি হবে বলে জানানো হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “এই মুহূর্তে আমরা কেন্দ্রীয় ভাবে অনলাইনে ভর্তি না করে কলেজগুলিকে আলাদা আলাদা ভর্তির কথা বলেছি, যাতে বিভ্রান্তি না ছড়ায়। কিন্তু একই সঙ্গে আমাদের যে কেন্দ্রীয় অনলাইন ভর্তি ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে, সেখানে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন এবং পরিমার্জনের কাজ আমরা জরুরি ভিত্তিতে চালাব, যাতে এই ব্যবস্থাটিকেও আমরা এই বছরই চালু করতে পারি।”
তবে তুড়িঘড়ি রাজ্যের এই শিক্ষানীতি বদলের সিদ্ধান্ত নিয়ে ভিন্ন মত শিক্ষা মহলে। এই নির্দেশিকা নিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, “যখন প্রায় সমস্ত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্নাতক স্তরের ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে, সেখানে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোনও অতিরিক্তি পরিকাঠামো না দিয়ে, একদমই শেষ মুহূর্তে 4 বছরের কোর্সে ভর্তির সিদ্ধান্ত নিল । এর ফলে সরকার আরও একবার প্রতিষ্ঠা করল যে তারা সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আগামিদিনে বেসরকারি হাতে তুলে দেবে ।’’ অন্যদিকে এই সিদ্ধান্ত অস্পষ্ট বলে উল্লেখ করেছেন শিক্ষাবিদ দেবাশিস সরকার। তাঁর কথায়, “জাতীয় শিক্ষানীতিতে বলা আছে যদি কোনও পড়ুয়া পড়াশোনার মাঝে সেই কোর্স থেকে বেরিয়ে যেতে চায়, তাহলে সেও একটি সার্টিফিকেট হাতে নিয়ে ওই বছর বেরোতে পারবে । এই বিষয়গুলো কিছুই বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট করে বলা হয়নি । তার ফলে যাঁরা অনার্স ও পাস কোর্সে ভর্তি হবেন, তাঁদের মধ্যে তার সংশয় থেকে যাবে । এটা ভাবতে অবাক লাগছে যে একটা দফতর যে এত বড় একটা নীতি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এত সংকটে ভুগছে ।”
প্রসঙ্গ, চলতি বছর থেকেই যে সকল কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছরের স্নাতক কোর্স শুরু হতে চলেছে সেগুলি হল দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, অসম বিশ্ববিদ্যালয়, শিলচর, তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয়, সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিনি অফ জম্মু, সিকিম বিশ্ববিদ্যালয়, ন্যাশনাল সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয় এবং মৌলনা আজাদ ন্যাশনাল উর্দ্ধপ বিশ্ববিদ্যালয়।