কাল তোতনের স্কুলে ইতিহাস পরীক্ষা। খাওয়া দাওয়ার পর পড়তে পড়তে বই এর ওপরই ঘুমিয়ে পড়েছে সে।কিন্তু এ কি,এ যেন এক রূপকথার গল্পঃ।আগে যা গল্পতে হতো তা আজ বাস্তবে।এক নিমিষে পৌঁছে যাওয়া যাচ্ছে ইতিহাসের পাতায় ছোঁয়া যাচ্ছে সব মুহূর্তগুলোকে।আস্তে আস্তে পরিষ্কার হচ্ছে তোতনের চোখে প্রাচীন যুগের স্থাপত্য ভাস্কর্য ও চিত্রকলা। তোতন বেরিয়ে পড়েছে এক জাদুকর রিকশা নিয়ে,ঘুরে বেড়াচ্ছে ধুলো পড়ে যাওয়া ইতিহাসের বিভিন্ন পাতায়, যাচ্ছে মুঘল সাম্রাজ্যে কখনো যাচ্ছে আদিম যুগে বা কখনো পৌঁছে যাচ্ছে মৌর্য সাম্রাজ্য।
রিক্সা করে যাওয়ার সময় এক বড় গুহা দেখে রিকশা থামিয়ে রিক্সা থেকে নামলো তোতন। এগিয়ে গেলো গুহার দিকে।তোতন বুঝতে পারলো এটি তার বাবা-মায়ের সাথে দেখতে যাওয়া সেই অজন্তা ইলোরা গুহো।গুহার মধ্যে চিত্র,শিল্পকলা দেখতে দেখতে মুগ্ধ হয়ে গেছিল তোতন, হটাৎ এক চিৎকারের আওয়াজে দৌড়ে গুহা থেকে বেরিয়ে এসে দেখে গাছের ছাল ও পশুর চামড়া পরা কিছুজন হাতে গাছের ডাল,পাথর নিয়ে গুহার দিকে এগিয়ে আসছে। তোতনকে দেখে তারা ভয় পেয়ে এমন জোরে চিৎকার শুরু করে, যা দেখে তোতন আরো ভয়েতে দৌড়ে রিক্সায় উঠে সেইখান থেকে তাড়াতাড়ি পালিয়ে যায়।
রিকশায় যেতে যেতে দেখতে পায় দূরে অনেক লোক জিনিসপত্র সাজিয়ে নিয়ে বসেছে। রিকশা থেকে নেমে সেখানে যাওয়ার সময় তোতন দেখতে পায় দিল্লির লালকেল্লা।এসব দেখে তোতন অনায়াসেই বুঝে যায় সে দিল্লির মুঘল সাম্রাজ্যে দাঁড়িয়ে আছে। আস্তে আস্তে বাজারের দিকে এগিয়ে গেলে দেখতে পায় রাস্তার দুপাশে পসরা সাজিয়ে মসলা কাপড় গয়না প্রভৃতি সামগ্রী বিক্রি করতে বসেছে। তোতন এসবদেখতে দেখতে হেঁটে হেঁটেই পৌঁছে যায় আকবরের দরবারে। সেখানে আকবর তার সবার নটি রত্ন বা নবরত্ন নিয়ে দরবারে বসে আছে। তোতন খুঁজে পায় সেখানে তার গল্পের বইয়ে থাকা বীরবলকে। বীরবল তখন এক কঠিন সমস্যার সমাধান করছেন, তো তোর নিজের চোখের সামনে বীরবলের সমস্যার সমাধান দেখবে বলে যেই না মেঝেতে বসতে যাবে তখনই দরবারের এক দাররক্ষী দৌড়ে ছুটে আসে তোতনের কাছে। সে লুকিয়ে দরবারে প্রবেশ করেছে বলে তাকে সম্রাটের কাছে নিয়ে যাবে। এসব দেখে তোতন ভয় দ্বার রক্ষী কে ফাঁকি দিয়ে একদৌড়ে প্রাসাদের বাইরে চলে এসে তার রিক্সাটিকে দেখতে পেয়ে তাতে উঠে সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
ওখান থেকে পালিয়ে রিকশায় অনেকটা দূর যাওয়ার পর, রিকশাটি একটা বড় মাঠের সামনে এসে থামলো। রিকশা থেকে নেমে তোতন এদিক ওদিক ঘুরছিল। সেই সময় দূর থেকে একটা কামানের গোলার শব্দ পেয়ে সেই দিকে ছুটে গিয়ে দেখল ব্রিটিশদের সঙ্গে অন্য একটি দলের যুদ্ধ লেগেছে।সে বিশাল যুদ্ধ,কত মানুষ আহত হচ্ছেন কত মানুষ আবার প্রাণ হারাচ্ছেন। প্রবল গোলা বর্ষণের ধোয়ায় আকাশ কালো হয়ে গেছে। এমন সময় পিছন ফিরতেই তোতন দেখল কামান তার দিকেই তাক করে একটি গোলা ছোড়া হয়েছে,এক্ষুনি তার বুকে এসে লাগবে গোলা টি।
– কিরে কাল তোর পরীক্ষা তুই এখনো ঘুমাচ্ছিস?
-ওঠ বলছি
কানে এক প্রবল ব্যথা অনুভব হওয়ায় ঘুম ভেঙে যায় তোতনের।সে দেখতে পায় কাল পরীক্ষা হওয়ার সত্ত্বেও বইয়ের ওপর ঘুমিয়ে পড়ায় তোতনের মা রণমূর্তি ধারণ করে তার কান মুলে দিয়েছে।
কিন্তু তোতনের মা তো জানেই না স্বপ্নের মধ্যে এক ম্যাজিক রিস্কায় চড়ে তোতন পৌঁছে গেছিল ইতিহাসের প্রতিটা পাতায় সেখানে ঘুরে ছিল জেনে ছিল সেই সময় ঘটে যাওয়া বিভিন্ন জিনিস, এ যেন এক স্বপ্ন হলেও সত্যি ঘটনা। তোতনের আর কোন ভয় নেই ইতিহাস নিয়ে, সে জানে কাল ইতিহাস পরীক্ষায় ফুলমার্কস সে পাবেই।