ক্রমশ বেড়ে যাওয়া মূল্যবৃদ্ধির বাজারে নাভিশ্বাস ফেলেছে সাধারণ মানুষ। বিশ্বে অর্থব্যবস্থা এক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি। প্রতিদিন বেড়ে যাওয়া নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামে অস্থিরতা বৃদ্ধি পেয়েছে সারা বিশ্বেই। সেই করোনা সংক্রমোনের থেকে শুরু হয়েছে দ্রব্যসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি, তা যেন কোনোভাবেই থামছে না। এর পাশেই আবার ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধ। তাছাড়াও যেসব দেশ আগে থেকেই কাঠামোগত দুর্বল, তার ওপর আবার মহামারীর এবং প্রাকৃতিক দূর্যোগ জনিত কারনে বিশেষ ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সেই সব দেশের মধ্যে অন্যতম হল শ্রীলঙ্কা যেখানে অর্থনৈতিক সঙ্কট এখন হাতের বাইরে চলে গেছে। আমাদের আরও দুই প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান ও নেপাল, ভয়ঙ্কর অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি। আর এক প্রতিবেশী দেশ, বাংলাদেশ সেখানেও স্বস্তি নেই। ভারত সহ বেশ কয়েকটি দেশে ক্রমশ সুদের হার বাড়িয়ে দিয়েও কোনো লাভ হয়নি, বরং যখন পণ্য সরবরাহ করা যাচ্ছে না ঠিক সেই সময় সুদের হার বাড়িয়ে টাকার জোগাড়ে রাশ টানার ফলে মুখ থুবরে পড়ছে শিল্পক্ষেত্রের উৎপাদন। সুদ বেড়ে যাবার ফলে চাপে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।
চলতি বছরে অর্থ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দফায় দফায় ছাঁটাই করে চলেছে আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডার বিশ্ব ব্যাঙ্ক, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সহ অনেকেই। সেপ্টেম্বরের মূল্য বৃদ্ধির হার বেড়ে হয়েছে ৭.৪% এবং খাদ্য পণ্যের মূল্য হয়েছে ৮.৪%। তবে এতকিছুর মধেও কিছুটা স্বস্থির আশা পাওয়া যাচ্ছে কারণ, আরবিআই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে দু’বছরের মধ্যে মূল্যবৃদ্ধি ৪% নামানোর। তবে এতে কি সব সমস্যার সমাধান হবে তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। এখন আরবিআই মোট ১৯০ টি বেসিস পয়েন্ট সুদ বাড়িয়েছে এবং তার হার এসে দাড়িয়ে ৫.৯%। তবে এর তীব্র আশঙ্কা রয়েছে যে ডিসেম্বর মাসে আরোও ৩৫ থেকে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়তে পারে, যদিও এতে ক্ষতি শিল্প উৎপাদনেরই হবে। এর মধ্যে আবার জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসের ফল প্রকাশ, ইনফোসিস এর নীট লাভ ১১ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৬০২১ কোটি। এরই পাশাপাশিই ৮.৪% বেড়ে টিসিএস এর মুনাফা ১০ হাজার ছাড়িয়ে হয়েছে ১০,৪৩১ কোটি টাকা। এইচসিএস টেকের ৭% বেড়ে হয়েছে ৩৪৮৯ কোটি টাকা। এইচডিএফসির ব্যাংকের ২০% বেড়ে হয়েছে ১০,৬০৫ কোটি টাকা।
বিশেষত রপ্তানির তুলনায় আমদানি বেশি হলে, সেই দেশের মুদ্রার পরিমাণ কমতে থাকে। তবে ভারতের ক্ষেত্রে দেখা গেছে আন্তর্জাতিক বাজারে যখনই তেলের দাম মাত্রাচারা দিয়ে ওঠে তখনই দামের পরিমাণ কমে গেছে। তাছাড়াও অনেক সময় বৈদেশিক মুদ্রার জোগানের ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা গিয়েছে। সাম্প্রতিককালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও অভূতপূর্ব মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে এবং সুদের হার বাড়িয়ে এর মোকাবিলা করা যাবে এমন আশায় নিয়েই সেখানে সুদের হারও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ভারতের মত উন্নয়নশীল দেশে ও বিনিয়োগ ব্যাহত হতে পারে এবং কার্যকরী পুঁজির খরচ বাড়তে পারে, ফলে মন্দ পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে। কিন্তু অর্থনৈতিক নীতি নির্ধারণ শুধু বাস্তবের উপর ভিত্তি করেই হয় না। সেটা নির্ভর করে দীর্ঘ সময় ধরে চড়া মূল্যস্ফীতি হলে তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে সুদের হার নির্ধারণের প্রশ্নও উঠতে পারে।