images (5)

প্রয়াত ও.আর.এস স্রষ্টা ডা: দিলীপ মহলানবিশ: অন্তরালেই থাকলেন উজ্জ্বল নক্ষত্র

কলেরা ডায়রিয়া অথবা শরীরে জল কমে গেলে মানুষের মৃত্যু অনিবার্য। এই ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে নুন চিনি মিশ্রিত জল খাইয়ে বহু মানুষের জীবন বাঁচিয়েছিলেন ডক্টর দিলীপ মহলানবিশ। দেশ বিদেশে কলেরা ডায়রিয়া চিকিৎসায় ব্যবহৃত ORS এর সৃষ্টি যার হাত ধরে, রবিবার কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে জীবনাবসান হয় দিলীপ মহলানবিশের। বার্ধক্য জনিত কারণে ১লা অক্টোবর থেকে হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর রবিবার রাত্রে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই বাঙালি চিকিৎসক। ORS এর সৃষ্টি, অধ্যাপনা, জীবনের অন্তিম সময় পর্যন্ত চিকিৎসা সাধনা করে যাওয়া এই চিকিৎসকের মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।

সাল ১৯৭১, ওপার বাংলায় মুক্তিযুদ্ধের দামামা বাজছে। নানান জায়গায় শরণার্থীদের শিবির। সেই সময় পশ্চিমবঙ্গের এক শরণার্থী শিবিরের তত্ত্বাবধানে ছিলেন দিলীপ মহলানবিশ। হঠাৎই কলেরা রোগের প্রকোপ আক্রান্ত হতে থাকেন একের পর এক শরণার্থী। তখনো পর্যন্ত কলেরা বা ডায়রিয়ার একমাত্র চিকিৎসা ব্যবস্থা ছিল ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে স্যালাইনের ব্যবহার। কিন্তু সেই সময় টান পড়ে মজুদ করা স্যালাইনের ভাঁড়ারে। বিকল্প ব্যবস্থা না করতে পারলে প্রাণ যাবে কয়েকশো মানুষের। অন্যদিকে ওরাল রিহাইট্রেশন থিওরি তখনও গবেষণাধীন। কিন্তু বাঁচাতে হবে বহু মানুষের প্রাণ , তাই সেখানেই তিনি প্রয়োগ করলেন নুন চিনি সোডা মিশ্রিত জল। প্রাণ বাঁচে কয়েক হাজার মানুষের, যদিও তখন এই গবেষণা পদ্ধতিতে স্বীকৃতি দেয় নি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এরপর তিনি সম্পূর্ণ করেন তাঁর গবেষণা, জনস হপকিন্স ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর মেডিকেল রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং এর সহায়তায় ওরাল রেহাইড্রেশন বা ওআরএস তৈরি করেছিলেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ দিলীপ মহলানবিশ। ১৯৪৮ সালে শুরু করা গবেষণাপত্রের কাজ শেষ হলে ১৯৭৩ সালে জনস হাপকিন্স মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত হয় তার গবেষণাপত্র পাশাপাশি তার গবেষণা স্বীকৃতি পায় ল্যনসেট পত্রিকাতেও। বিশ্ব দরবারে ব্যবহার হওয়া শুরু হয় ওআরএসের।

অবিভক্ত বাংলার কিশোরগঞ্জে জন্ম নেওয়া দিলীপ মহলানবিশ  চলে আসেন পশ্চিমবঙ্গে। ১৯৫৮ সালে কলকাতার মেডিকেল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাস করার পর সেখানেই শিশু বিভাগে শুরু হয় তার ইন্টার্নশিপ। এরপর ১৯৬০ সালে সুযোগ পান লন্ডনে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসে যোগ দেওয়ার। সেখানেই করেন DCH , MRPCO. যোগদান করেন কুইন এলিজাবেথ হসপিটাল ফর চিল্ড্রেনে রেজিস্টার পদে। তিনি প্রথম ভারতীয় চিকিৎসক যিনি মাত্র ২৮ বছর বয়সে ওই পদে যোগ দেন।

এরপর আমেরিকার জনস হাপকিন্স ইউনিভার্সিটি মেডিকেল কেয়ার ফেলো পদে যোগদান যার একটি আন্তর্জাতিক কেন্দ্র ছিল বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে। ৬৮ সালে দেশে ফেরার পর  বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে  যোগদান এবং শুরু করেন ওয়ারেস এবং স্পেশাল মেটাবলিক স্টাডিং গবেষণার কাজ।

এই অবদানের জন্য, ১৯৯৪ সালে, রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সের সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন ডা. মহলানবিশ। ২০০২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে পোলিন পুরস্কার, ২০০৬ সালে থাইল্যান্ড সরকারের কাছ থেকে প্রিন্স মাহিদোল পুরস্কারও পেয়েছিলেন।একাধিক সম্মানে ভূষিত হয়েও আজীবন থেকে গেলেন অন্তরালেই, তবে রেখে গেলেন আগামীর জন্য গবেষণার রসদ ।

 

Sounds Interesting? Share it now!

You May Also Like

👋Hello!

Guest User

 Terms of use | Privacy | Developer

Follow us on:

Notifications

Hi Guest User, here you'll get notifications about New Updates, Announcements & more...

Mobile Marketing Pana

Become A Social Media Manager!

LinkedIn reported that social media managers are the third most in-demand marketing position by posting volume in 2022. Learn, study & Acquire Practical Experience as a Social Media Manager & Get a Free Certificate!

Create✨

Oops...Sorry !

You have to Login to start creating on Youthesta.

Don’t have an account? Register Now

Not from Behala College but still Interested? Request