দিনটা ২০১৯সালের ৬ওই সেপ্টেম্বর তৎকালীন ইসরো চেয়ারম্যান কে শিভান কে দেখা যায় চোখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে আসছে চন্দ্রযান-২ এর মিশন কন্ট্রোল রুম থেকে সেই সময়ে নরেন্দ্র মোদী তাকে জড়িয়ে ধরে শান্তনা দেন। পরবর্তী সময়ে জানা যায় ভারতের চন্দ্রযান-২ মিশন ব্যার্থ হয়েছে। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নামার আগেই চন্দ্রযান-২ এর ল্যান্ডারের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ইসরোর মিশন কন্ট্রোল রুমের। চন্দ্রযান-২ এর ব্যার্থতার পরেই ইসরোর বিজ্ঞানীরা প্ল্যান করে ফেলে চন্দ্রযান-৩ মিশনের যা হবে চন্দ্রযান-২ এর ফলোআপ মিশন। মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যেই ইসরো তৈরী করে ফেলে চন্দ্রযান-৩। যা শ্রীহরিকোটা লঞ্চ প্যাড থেকে ‘এলভিএম-৩ এম-৪’ লঞ্চ ভেহিকেল এর মাধ্যমে লঞ্চ হতে চলেছে ১৪ওই জুলাই দুপুর ২.৩৫মিনিটে। এই নিয়ে চাঁদে ভারতের তৃতীয় মিশন।
চন্দ্রযান-৩ এর বাজেট কত?
ইসরো সবসময়েই অল্প খরচে স্পেস মিশন গুলো করার চেষ্টা করে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে মঙ্গলযান যেই মিশনটি করা হয়েছিল মাত্র ৪৫০কোটি টাকায়। এত অল্প টাকায় মঙ্গলযান বানিয়ে প্রথম বারেই সফলতা পেয়েছিল ভারত যেখানে অনন্য উন্নত দেশ গুলি এর চেয়ে বহু টাকা খরচ করে একাধিক বার চেষ্টা করেও মার্শ মিশনে সফলতা পায়নি। চন্দ্রযান-৩ তৈরী করতে ইসরোর খরচ পড়েছে ৬১৫কোটি টাকা। যা সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া “অভ্তার দ্য ওয়ে অফ ওয়াটার” সিনেমার বাজেটের প্রায় হাফ।
চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নামা কতটা কঠিন চন্দ্রযান-৩ এর পক্ষে?
আজ অবধি চাঁদে অবতরণ নিয়ে যে সমস্ত মিশন হয়েছে তা চাঁদের নিরক্ষীয় অঞ্চলে হয়েছে। কারণ এই অংশে অবতরণ করা অপেক্ষাকৃত সোজা এবং যন্ত্রের দীর্ঘ কার্যকারিতার জন্য এই অংশের তাপমাত্রাও বেশ অনুকূল। সর্বোপরি চাঁদের নিরক্ষীয় অংশের মুখ পৃথিবীর দিকে। এই সমস্ত কারণের জন্যই চাঁদের মিশন গুলো নিরক্ষীয় অঞ্চলেই করা হয়। ভারত একমাত্র দেশ যে চন্দ্রযান-২ মিশনে চেষ্টা করেছিল চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নামার। চন্দ্রযান-৩ কেও দক্ষিণ মেরূতেই নামানো হবে। চন্দ্রযান-৩ মিশন সফল হলে ভারত চাঁদের দক্ষিন মেরুতে পৌঁছানো পৃথিবীর প্রথম দেশ হবে। বিশেষজ্ঞ দের মতে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে প্রচুর পরিমাণ জল বরফ রূপে রয়েছে।
কিন্তু চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করার বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। চাঁদের এই অংশে সূর্যের আলো পৌঁছায় না যার কারনে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর তাপমাত্রা – ২৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে এই তাপমাত্রায় যন্ত্রের কার্যকারিতা অনেক অংশে কমে যায়। চন্দ্রযান-২ যে যে কারণে ব্যর্থ হয়েছিল সেই কারণগুলোর উপর চন্দ্রযান-৩ এ নজর দিয়েছে ইসরো। বেশ কিছু বদল করা হয়েছে চন্দ্রযান-৩ এ সেগুলি হল- চন্দ্রযান-৩ এ হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার এর পরিবর্তন করা হয়েছে যাতে চন্দ্রযান-৩ কে মসৃণ অঅবতরণ করানো যায়, এছাড়াও ৫টি থ্রাস্টার ইঞ্জিন এর পরিবর্তে ৪টি থ্রাস্টার ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে, ল্যান্ডারে আরও শক্তিশালী পা ব্যাবহার করা হয়েছে এবং ল্যান্ডারে সোলার প্যানেল এর পাশাপাশি জ্বালানিও রাখা হবে।
ইসরোর চেয়ারম্যান শ্রীধর সোমনাথ জানিয়েছেন চন্দ্রযান-৩ মিশনের স্থায়িত্ব হবে ১৪দিন। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে চন্দ্রযান-৩ এর অবতরণ সফল হলে তা ভারতের প্রযুক্তির দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য হবে।