ভু-রাজনৈতিকদের একাংশের মত খানিক এমনই। গতকাল পৃথিবীর অন্যতম দাপুটে বেসরকারি সামরিক সংস্থার মূল মাথা এভজেনি প্রিগোজিন-কে সাম্প্রতিক সময়ে গা ঢাকা দেওয়ার পরামর্শ দিল বেলারুশের রাস্ট্রপতি আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো। গত ২৪ শে জুন সন্ধ্যে সাতটা (রাশিয়ার সময় অনুযায়ী) নাগাদ যখন প্রিগোজিনের সামরিক বাহিনী রাশিয়ার অন্যতম সচল বাণিজ্যিক শহর রস্তভ-অন-দন কব্জা করে নেয়, সেদিন রাত্রি বেলাই প্রিগোজিনের নির্দেশে ওয়েগনার গ্রুপের একটি দল পাড়ি দেয় মস্কোয়। উদ্দেশ্য, রাশিয়ার প্রাণকেন্দ্র দখল করে দেশের রাস্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনকে কড়া বার্তা তথা যথাক্রমে কিছু নির্দেশ দেওয়া।
শুধু রাসিয়া – ইউক্রেন যুদ্ধেই তিন লক্ষ সৈন্য নামিয়ে রাশিয়াকে সাহায্য করা নয়, সোলেদার ও বাখামুটের মতো বিভিন্ন শহরে কব্জা জমাতেও রাশিয়াকে নানান সময়ে সাহায্য করেছে প্রিগোজিনের এই সংস্থা – ওয়েগনার গ্রুপ। কিন্তু সম্প্রতি একটি অন্তরদন্দের কারণে প্রথমে ভোরোনেজে কিছু ক্ষয়ক্ষতি, তারপর দক্ষিণ রাশিয়ার সামুদ্রিক শহর রস্তভ-অন-দনে কব্জা এবং সবশেষে মস্কোর উদ্দেশ্যে “ন্যয়বিচারে মস্কো” যুদ্ধনাদ গাইতে গাইতে এগিয়ে যায় তারা। বিশ্ব রাজনীতিতে এর একটা ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে আন্দাজ করেই হয়তো রাশিয়ার পড়শি দেশের রাস্ট্রপতি তথা প্রিগোজিনের বহুদিনের বন্ধু আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো দুই পক্ষের মধ্যস্থতা করতে সামনে এগিয়ে আসেন। বেশ কয়েক দফা আলোচনার পর তিনি ওয়েগনার গ্রুপের যে সকল সেনা মস্কোর উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়েছিল, তাদের ঘাঁটিতে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করেন এবং রাশিয়াকে অনুরোধ করেন ওয়েগনার গ্রুপের বিরুদ্ধে পুরোনো আনুগত্যের নিদেনে কোন কঠিন পদক্ষেপ না নেওয়ার।
ওয়েগনার গ্রুপ আসলে কি? কেনই বা তাদের এতো ত্রাশ সারা বিশ্বে? ভু-রাজনৈতিকদের মতে, প্রতিটি সরকারের একটি করে বেসরকারি হাত রয়েছে যাদের দ্বারা নৈতিক কারণে অনেক অনৈতিক কাজকর্ম করানো হয়। উদাহরণ স্বরূপ, আফগানিস্তানে ঘাঁটি জমিয়ে রাশিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে আমেরিকা এমনই এক সংগঠনের সাহায্য নিয়েছিল, যার সভাপতি ওসামা – বিন – লাদেন! ইন্দিরা গান্ধীর পাঞ্জাব কান্ডের কথাও বলা যায় যদিও নানা মুনির এই বিষয়ে বহু মতবাদ রয়েছে। বিভিন্ন কূটনীতিবিদদের মতে, রাশিয়ার সঙ্গে এই ওয়েগনার গ্রুপের সখ্যতা মোটেও ভালো চোখে দেখতে পারেননি দেশের সামরিক বাহিনীর অন্যতম দুই মাথা – সেরজি শোয়গেন ও ভালেরি গেরোশিমভ। দুই পক্ষের চাপানউতোর বেড়ে যাওয়ায়, ওয়েগনার গ্রুপের সভাপতি প্রিগোজিন দেশের রাস্ট্রপতিকে কার্যত আদেশ করে বসে, এই দুই আমলাকে যেন তার সংগঠনের হাতে চটজলদি তুলে দেওয়া হয়। যদিও, সমস্ত কিছু নির্ঝঞ্ঝাট ভাবে ও নুন্যতম রক্তক্ষয়ের বিনিময়ে সামাল দেওয়ার জন্যে ভ্লাদিমির পুতিনের প্রশংসায় পঞ্চমুখ নেটদুনিয়া।
মনে করা হচ্ছে, এই অন্তরদন্দেরই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ইউক্রেনে নিজেদের ঘাঁটি শক্ত করতে পারে নাটো (NATO)। ওয়েগনার আর কোনভাবেই রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকবে না এবং যুদ্ধের ধারও যে অনেক গুন কমবে, এমনও দাবি অনেকের।
তবে কি ওয়েগনার গ্রুপ একেবারেই নির্মূল হয়ে গেল? শোনা যায়, সিরিয়া, লিবিয়া এবং আফ্রিকার বহু অঞ্চলে রাশিয়ার প্রভাব বিস্তার করতে পুতিনের প্রধান ভরসা এই ওয়েগনারই। হয়তো বা নতুন নামে ফিরে আসবে তারা। আবার নাও আসতে পারে। আবার, পুরোটাই একটা লিখিত খসড়া নয়তো?