বসন্ত এসে গেছে, আর বসন্ত উৎসবের আগেই বাঙালি মেতে উঠেছে আর এক উৎসবে। পলাশের গন্ধ ভুলে গোটা বাঙালি জাতি এখন বইয়ের নতুন পাতার গন্ধে মাতোয়ারা। গত সোমবার, অর্থাৎ ২৮ -এ ফেব্রুয়ারী মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্বোধন করেন ৪৫তম আন্তর্জতিক বই মেলা। সঙ্গে ছিলেন মেয়র ফিরাদ হাকিম সহ সুজিত বসু মেলা রায় এবং বাংলার জেনারেল সেক্রেটারি কুনাল ঘোষ। উদ্বোধনের দিন থেকেই বাচ্চা থেকে বৃদ্ধ সবার হাতেই বই। বাচ্চাদের জন্য যেমন রয়েছে ‘টিনটিন’ তেমনই বড়দের জন্য রয়েছে নবনীতা দেবসেন এর ‘ভালোবাসার বারান্দা’। মধ্য বয়সের হতে ‘ফেলুদা সমগ্র’ কিংবা ‘ব্যোমকেশ সমগ্র’ আবার নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় রচিত ‘টেনিদা’, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘কাকাবাবু’ কিংবা সমরেশ বসুর ‘আগুনবেলা’ বা ‘সেই গাড়ির খোঁজে’ ব্যাস্ত তারা। ইংরেজি মাধ্যমের অনেকেরই চন্দ্রচূড় ঘোষের লেখা ‘BOSE’ বইটি দেখে আকর্ষিত। মা বাবার হাত ধরে খুদেরা চিনে নিচ্ছে আগাথা ক্রিস্টি কে অথবা হাইকুরু মুরাকামি, জেফরি আর্চার, জুলস ভার্ন এবং ডেন ব্রাউনকে।
কোথাও শোনা যাচ্ছে বাউল সঙ্গীত কোথাও আবার কলেজ থেকে ছাত্রছাত্রীরা সবার মাঝেই গান বাজনার মধ্যে আনন্দে মাতিয়ে রাখছে। কোথাও কোনো কাউন্টার এর আওয়াজ আসছে সমরেশ মজুমদারের ‘সমরেশ মজুমদারের সমগ্র’ দে কোথাও বা লেসলি করার ‘দি রুমার’ সব মিলিয়ে জমজমাট ৪৫তম আন্তর্জতিক বই মেলা। এইবছরে বইমেলার থিম কান্ট্রি – বাংলাদেশ। এখানে বলে রাখা ভালো, প্রতিবছরের মতন এবছরও স্পেন, ইতালি, আমেরিকা, ফরাসি, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা সহ আরো ভিন্ন দেশের বই বা তাদের সাথে ভারতের কি সম্পর্ক এবং কিভাবে তাদের সংস্কৃতি সাথে জড়িত ভারত তার বিষয়েও বই রয়েছে। সবমিলিয়ে ৫৬০ টি বইয়ের স্টল বসেছে। তবে, বাঙালি খাদ্য রসিক মেলায় এসে কিছু না খেলে মেলা ঠিক পূর্ণতা পায় না তাই রয়েছে মিষ্টি, কেক, ফাস্টফুডের স্টল।
বই পড়ার অভ্যেস নতুন প্রজন্মের মধ্যে থেকে চলে যাচ্ছে, স্টার্মারক পাবলিশার এর স্টল থেকে এক কর্মীর বক্তব্য- “বই পড়ার অভ্যেস চলে যাচ্ছে বলেই এই বই মেলা আরো প্রাধান্য বেড়ে যাচ্ছে, যারা বই পড়তে ভালো বাসেনা তারাও একবার হলেও ঘুরে যায়, সাথে বই হয়তো দুয়েকটা কিনেও নিয়ে যায় এরকম করে বজায় থাকছে বাঙালির বই পড়া। বই পড়া একটা আলাদা জিনিস কাউকে বলে আপনি বই পড়াতে পারবেন না। কিন্তু একবার যদি সে ইন্টারেস্ট পেয়ে যায় তাহলে সে বই পড়বে।এখন পড়াশোনার জন্য ই-বুক পাওয়া যায় কিন্তু নতুন বইয়ের গন্ধ বই পড়া এটার সাথে কখনই অনলাইনে বই পড়ার তুলনা হতে পারে না। আমার মতে বই পড়লে নিজের কল্পনা শক্তি বহুগুণ বৃদ্ধি পায় কম্পিউটারে বই পড়ার থেকে, আপনি বুঝে একটা বই পড়লেন বইটা একটা মেমেন্টো হিসেবে আপনার কাছে থেকে যাবে বইটা কাছে থাকলে দিনে দুবার করে চোখ পড়বে আপনার গল্পটা মাথায় থাকবে এবং সেখান থেকে নিজের কল্পনা শক্তির দ্বারা বা উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজের একটা গল্প লিখতে পারেন।“
বেহালা কলেজের সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ধৃতিমান দত্ত জানান “এই বছর নিয়ে দ্বিতীয় বই মেলা আমার। বেশ ভালো লাগছে এখানে এসে, এটা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখেনা এটা ভালোবাসার জায়গা তো বটেই। কলেজ স্ট্রিট বা বই পাড়া তে সব বই পাওয়া যায় না কিন্তু এখানে সমস্ত বই পাওয়া যায়। ভালো বই পড়তে গেলে দাম দিয়ে পড়াই ভালো বলে আমার মনে হয়। খুব ভালো লাগছে কয়েকটা বই কিনে ফিরবো। তবে সব বই কিনে পড়া সম্ভব না কোনো বই আমাদের পিডিএফ পরে নিলে সুবিধা হয় কিন্তু সেই অনুভূতিটা কোথাও গিয়ে হারিয়ে যায়। কিন্তু বই সংস্কৃতি মানেই বাঙালি। যেই দেশের মাটিতে রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিমচন্দ্র, বিদ্যাসাগর, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত মানুষেরা জন্মেছে সেই জাতি কি বই না পড়ে থাকতে পারে।”
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ দু সপ্তাহ ধরে চলা এই মেলা শেষ হবে ১৩ই মার্চ রবিবার। এবছর বইমেলা উজ্জাপিত হচ্ছে সেন্ট্রাল পার্কে। বই মেলার সময় সীমা দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা।