বিশ্বকবি একবার ছোট্ট মানিকের ডাইরিতে লিখছেন,
‘বহু দিন ধ’রে বহু ক্রোশ দূরে
বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে
দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা,
দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু।
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া
একটি ধানের শিষের উপরে
একটি শিশিরবিন্দু।’
আজ্ঞে হ্যাঁ, বিগত দেড় বছরের মহামারি কাটিয়ে যখন বারংবার ভাবনাচিন্তা চলছে ঠিক কোন দেশে পাড়ি দেওয়া সম্ভব, তখন কেউবা বলে উঠলো দিল্লি চলো, কেউবা আবার একেবারে দক্ষিণে। কন্যাকুমারী। ঘুরতে যাওয়ার একটা ইচ্ছা ছিলই। তাই আর সাত পাঁচ না ভেবে, পরের কথা পরে হবে….এই পরিকল্পনা নিয়েই বেহালা কলেজের সাংবাদিকতা বিভাগ পাড়ি দিল একেবারে বাঙালির আঁতুড়ঘর, শান্তিনিকেতন।
সকাল সাড়ে দশটায় ট্রেন, একটায় বোলপুর। সেখান থেকে কুড়ি মিনিট টোটো করে গেস্ট হাউস। গুপ্তধন গল্পের সেই বিখ্যাত উক্তি মনে পড়ে যায়,’ওগো সন্ন্যাসী, তুমি কোথায়? চাহি না আমার সোনা দানা, চাহি না আমার হীরে-যহরত, আমাকে তুমি মুক্তি দাও। খোলা আকাশের নিচে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করাও।’ কলকাতার জাঁতাকলে যখন দিনরাত দুমড়িয়ে মুচড়িয়ে দম বন্ধ হওয়ার জোগাড়, তখন বিকেল বেলা কোপাই নদীর তীরে বেশ লাগে। নদীর দু’ধারে নানান হস্তশিল্পের বাহার, মধ্যিখানে ঘুমন্ত নদী আর পড়ন্ত আকাশ। কথিত আছে, এই কোপাই নদীর তীরেই বসে নাকি দরদী কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লিখেছিলেন এক অমর উপাখ্যান, শ্রীকান্ত।
সে যাই হোক, ওই দিন বিকেলে কোপাই নদীর তীর আর হস্তশিল্পের বাজার ঘুরে বেড়ানোর পর, আগামীকাল আমরা গিয়ে পৌঁছলাম রবীন্দ্র মিউজিয়াম, বিশ্বভারতী ক্যাম্পাস ও সোনাঝুরীর হাট। রবীন্দ্র মিউজিয়াম যারা আগে গিয়েছে তারা জানে, পরিবেশটা ঠিক কি রকম! কিন্তু, যারা এখনও গিয়ে উঠতে পারেননি, তাদের জন্যে…..থাক না! সব বলে দিলে কি আর মজা থাকে? নিজেকেও তো খুঁজে বের করতে হয়!
তবে, দু’রাত তিন দিনের এই অদ্ভুত থমকে যাওয়া সময়ে যেটা শিখেছি, সেটা একটু বলা দরকার। সোনাঝুরী হাটে যাওয়ার আগে বাড়িতে একবার দরদাম অনুশীলন করা অত্যন্ত আবশ্যক। নাহলে আপনি ধরতেই পারবেন না, কখন……