কথায় আছে যে সময় নাকি সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস সময় কারোর জন্য থেমে থাকে না এবং সময় একবার চলে গেলে ফেরত ও আসে না। আর এখনকার এই যুগে দাঁড়িয়ে সময়ের মূল্য প্রায় সবাই বুঝে। তাই এই ব্যস্ততার যুগে দাঁড়িয়ে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নেওয়ার সময় ও কারোর হাতে নেই বললে চলে ঠিক তেমনি বিবেক নামের বছর ২০ এর এক ছেলে তারও জীবনে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নেওয়ার সময় নেই বললেই চলে সকালে ঘুম থেকে উঠে টিউশন টিউশন থেকে কলেজ আবার কলেজ থেকে বিকেলে ঘরে ফিরে ক্রিকেট প্র্যাক্টিস। বিবেকের আবার ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন যে সে কিনা ভারতের জার্সি পরে ভারতের হয়ে খেলবে। পাশাপাশি বিবেক পড়াশোনাতেও বেশ ভালো তার ইতিহাস নিয়ে খুব আগ্রহ বিশেষ করে ভারতের ইতিহাস। বিবেক প্রেসিডেন্সি কলেজের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। একদিন বিবেক কলেজ থেকে ফিরছিল সময় তখন দুপুর দুটো নাগাদ আজকে ইতিহাস বিভাগের একজন অধ্যাপক আসলে ছুটিতে ছিলেন তাই আজকে তিনটের দিকের ক্লাস টা হয়নি। বাস থেকে নেমে বিবেক নিজের বাড়ির দিকে হেটে যাচ্ছিলো তখনই সে হটাৎ এক রিকশায় হোঁচট খেয়ে যায় নিজেকে সামলে বিবেক রিকশা ওয়ালা কে বলে যে কাকু একটু রাস্তার বাঁ দিক ঘেঁষে রিকশা টা রাখবে তো তোমার রিকশার জন্য আমি হোঁচট খেলাম। তখন সে রিকশা ওয়ালা বলেন যে এটা কোনো সাধারণ রিকশা নয় কিন্তু একটা একটা জাদুকরী রিকশা এ নিজের ইচ্ছে অনুযায়ী যেখানে খুশি যেরকম খুশি দাঁড়িয়ে থাকে। বিবেক সে রিকশাওয়ালা কে বলে কী ভুলভাল বকছো গরমে মাথা খারাপ হয়ে গেল নাকি। সে রিকশাওয়ালা ব্যক্তিটি বলে যে এই রিকশাটির ওপর কয়েকশো শতাব্দী আগে বসবাসকারী একজন শক্তিশালী জাদুকর দ্বারা মন্ত্রমুগ্ধ করা হয়েছিলো এবং এ রিকশা বিভিন্ন বিভিন্ন যুগে ভ্রমণ করতে পারে। বিবেক মনে মনে ভাবতে থাকে নিশ্চই কাকুর মাথা খারাপ হয়ে গেছে এই গরমে বিবেক বেশি কথা না বাড়িয়ে সেই জায়গা থেকে চলেই আসছিলো তেমনি পেছন থেকে সেই ব্যক্তি বলতে লাগলো বিশ্বাস না হলে বসেই দেখো আর যদি আমার কথা সত্যি না হয় তাহলে যা বলবে মেনে নেবো। বিবেকের মনে একটু ইতস্তত বোধ করলেও একজন ইতিহাস এর ছাত্র হওয়ায় পুরোনো যুগ ভ্রমণের কথাটা শুনে বিবেক নিজের লোভকে প্রতিহত করতে পারেনি এবং মনে মনে যদিও ভাবছিলো থোড়ি না সত্যি সত্যি পুরোনো যুগে পৌঁছে যাবো লোকটি বলছে যখন বসেই যাই। রিকশায় উঠে বসলো বিবেক এবং লক্ষ্য করলো যে লোকটির মুখে এক অদ্ভুত হাসি হাসি ছিল এবং বিবেক কে জিজ্ঞেস করলো যে কোন যুগে যেতে চায় সে বিবেক বললো আমাকে মুঘল সাম্রাজ্যের সময় নিয়ে চলুন। এই শুনে সেই রিকশাওয়ালা কি একটা করে এবং রিকশা টা কেঁপে কেঁপে উঠলো বিবেকের মনে হল যেন সময় ও স্থানের মধ্যে দিয়ে তাকে টেনে নেওয়া হচ্ছে এবং বিবেক জ্ঞান হারিয়ে ফেলে যখন তার চোখ খুলল সে নিজেকে পুরোনো দিল্লির কেন্দ্রস্থলে একটি কোলাহলপূর্ণ বাজারের মধ্যে পেলো যা দেখে সে নিজেই অবাক হয়েগেছিলো। রাস্তার দুধারে মশলা, কাপড় এবং গয়না বিক্রিকারী ব্যাবসায়ীদের দ্বারা ভরতি ছিল। বিবেক দূর থেকে ঘোড়া ও উটের আওয়াজ শুনতে পায়। বাজার দিয়ে হেটে যাওয়ার সময় বিবেক লক্ষ্য করলো যে এক ব্যক্তি ঘোড়ায় চেপে যাচ্ছেন এবং তার দরবারি ও সৈন্যরা ঘিরে ছিলেন তাকে। আশেপাশে কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলো যে ইনিই হচ্ছেন সম্রাট আকবর বিবেক আরো চারিপাশে ঘুরে দেখল এবং তার চোখে পড়লো মুঘল যুগের মুদ্রা যা দেখে বিবেক সম্পূর্ণ অবাক সে এখনো বিশ্বাস করতে পারছিলো না যে সে সত্যিই মুঘল যুগে এসে গেছে চারদিকের দৃশ্য দেখে বিবেক সত্যিই অভিভূত। আরো চারিপাশে বিবেক ঘুরে দেখতে লাগলো এবং হাঁটতে হাঁটতে বিবেকের জল তৃষ্ণা পেয়েছিলো তাই সে একটি দোকানে গেল যেটি একটি মশলাপাতির দোকান ছিল দোকানদারকে জিজ্ঞেস করলো যে আপনার কাছে জল পাওয়া যাবে খাওয়ার জন্য কিন্তু বিবেক তো আছে মুঘল যুগে আর এখানের মানুষজন তো বাংলা বুঝে না তাই বিবেক অনেক কষ্টে অঙ্গভঙ্গির দ্বারা দোকানদারকে বোঝালো যে তার জল চাই সে জল খেয়ে সেখান থেকে থেকে চলে আসে। বিবেক এর বেশ ভালোই লাগছিল এখানে তাই সে আরো কিছু নতুন জিনিস এর দর্শন এর জন্য এদিক ওদিক ঘুরতে লাগলো সে মুগ্ধ হয়েগেছিলো মুঘল সাম্রাজ্যের সংস্কৃতি, পোশাক পরিচ্ছদ ইত্যাদি দেখে এমন সময় হটাৎ যেন কানের কাছে অ্যালার্ম বেজে উঠলো আর মায়ের গলা পেল বলছে যে এই ওঠ কত বেলা হয়ে গেল কলেজ যাবি না বিবেক হঠাৎই তড়িঘড়ি করে ঘুম থেকে উঠে পড়লো সে দেখলো যে নিজের শোয়ার ঘরেই আছে সে তখন বুঝতে পারলো যে সে স্বপ্ন দেখছিলো এবং সে খেয়াল করলো যে বালিশের পাশে একটা কল্পবিজ্ঞান এর গল্পের বই রাখা ছিল এবং সে যে টাইম ট্রাভেল নিয়ে গতরাতে গল্পটি পড়ছিলো পড়তে পড়তে কখন যে সে ঘুমিয়ে পড়েছিল তার মনে নেই। তারপর বিবেক বিছানা ছেড়ে উঠে এবং ফ্রেশ হয়ে নিজের প্রাতরাশ সেরে রোজকার দৈনন্দিন জীবনের মতো কলেজে চলে যায়।