professor-shanku-illustration-youthesta

Image Courtesy: youthesta.in

চিচিং ফাঁক!‎                          

Post Score: NA/5
Topic & Research
NA/5
Creativity & Uniqueness
NA/5
Timeliness & Social Impact
NA/5
Score available after assessment. Please check back later.

একটা বিকট ক্যাঁএএএচচচ শব্দে লোহার জীর্ণ দরজাটা ধীরে ধীরে খুলে গেল। নকুড় বাবু উঠে বসলেন। এটা কি হলো? সাও পাওলোর বিলাশবহুল পাঁচতারা থেকে এ কোথায় কোন গন্ডগ্রামে এসে পড়েছেন তিনি? তিলুবাবুও বা কোথায়?

মাথাটা কেমন যেন ভার হয়ে আছে। পাথরের বেদিটায় ঠেস দিয়ে তিনি চারপাশটা দেখতে লাগলেন। ঘুটঘুটে অন্ধকার। আঁধারে চোখ না সয়ে গেলে কিছুই ঠাওর করা অসম্ভব। এমন সময়, একটা ক্ষীন অথচ দৃঢ় কাকুতি শুনতে পেলেন তিনি। তার সঙ্গে বাঘের চাপা ঘরর্ ঘরর্ গর্জনও। কে যে প্রাণ পনে চিৎকার করে চলেছে,’বুরুন, তুমি অঙ্কে তেরো পেয়েছ! বু…রু….না…., তুমি অঙ্কে তেরো পেয়েছ!

বুরুনটাই বা কে? আর তার অঙ্কে তেরো পাওয়ায় এতো কোলাহলই বা কিসের? নকুড় বাবুর আশ্চর্যের এখানেই শেষ নয়। এতক্ষণে লোহার কপাট সরিয়ে ষণ্ডা গোছের যে ছায়ামূর্তি তাঁর দিকে ভেসে এসেছে, এখন হ্যারিকেনের আলোয় তার চেহারা স্পষ্টই দৃশ্যমান। নকুড় বাবু দেখলেন, লোকটার গলায় রক্তজবার মালা, পরনে তার লাল ধূতি। লোকটা হাতে মস্ত একখান খড়্গ ধরে কি যেন বিড়বিড় করে চলেছে অনবরত।

তাঁকে কি নরবলি দেওয়ার জন্যে ধড়পাকড় করা হয়েছে? চিন্তাটা ধেয়ে আসতেই আঁতকে উঠলেন নকুড়বাবু। এখন প্রফেসর শঙ্কু কোথায় ভাববার সময় নেই। যদি বাঁচতে হয়, যা করার নিজেকেই করতে হবে। তিনি ভেবে দেখলেন, লোকটার বেশভূষা যা, দেখে ডাকাতই গণ্য হয়। বৈকুণ্ঠ মল্লিকের বইয়ে শ্মশান কালির একটি রঙিন ছবি তিনি আগেই দেখেছিলেন। তিনি সঙ্গে সঙ্গে নিজের দুহাত তুলে হাবু ডাকাতের সামনে আঙুলগুলো নাচাতে লাগলেন।

ব্যস! কেল্লা ফতে! যে হাবু ডাকাতের ভয়ে বাঘে গরুতে এক ঘাটে বসে জল খায়, সেই হাবু ডাকাতকেই দেখা গেল খড়্গ ফেলে হাঁটু গেঁড়ে বসে হাউ হাউ করে কাঁদছে। আর কাঁদবেই না কেন? সামনে যে মা কালী স্বয়ং ভুরু কুঁচকে ক্রুদ্ধ চেহারায় দাঁড়িয়ে হাবুর দিকে রাগে ফুঁসছেন! হাবু সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করে এখন বলে চলেছে, রাগ কোরো না মা! কি ভুল করেছি আমি? রাগ কোরোনা প্লিজ! আমি সমস্ত কুকর্ম ছেড়ে দেব মা! ভুল হয়ে গেছে! এবারের মতো ক্ষমা করে দাও!

এক নাগাড়ে অনবরত বলেই চলেছে হাবু। অন্যদিকে আরেক ঝামেলা। সাও পাওলোতে হইচই পড়ে গিয়েছে নকুড় চন্দ্র বিশ্বাস উধাও। একে তিনি বিদেশি, তার ওপর বিখ্যাত ভারতীয় বৈজ্ঞানিক শ্রী ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কুর বন্ধু তিনি। বুরুন পাঁচতারা হোটেলে ঘুরতে ঘুরতে যখন একটা কামরার সামনে গিয়ে পৌঁছায় তখন দরজা খোলা দেখে আর সাতপাঁচ না ভেবে ভেতরে ঢুকে যায় সে। খুব অবাক লাগে ব্যাপারটা। কোথায় মেঘেদের রাজ্যে সে এতোক্ষণ ঘুরে বেড়াচ্ছিল, তারাদের সাথে খেলা করছিল, ঝরনার জলে স্নান….আচমকাই একটা ঝাঁকুনি আর সমস্তটাই অন্ধকার। যখন জ্ঞান ফিরল তখন সিঁড়ির এক কোনে শুয়ে রয়েছে সে। মাথাটাও অসম্ভব যন্ত্রনা করছে এখন। ইক্ করে একটা শব্দ করে ওঠে ছোট্ট ছেলেটা।

রুমের ভেতরে ঢুকতেই হতবিহ্বল দৃষ্টি নিয়ে একজন বৃদ্ধ প্রশ্ন করেন,’তুমিই বুরুন?’

‘হ্যাঁ, আমিই বুরুন।’

বৃদ্ধের টাক মাথা, গাল ভরতি দাড়ি। বুরুন দেখতে পায় সামনে একটা চেয়ার পাতা, হাতলে ও পিঠে নানা রঙের সব আলো চিকচিক করছে। এতোকিছুর মধ্যেও খানিক কৌতুহলের বশে বুরুন জিজ্ঞেস করে,’ওটা কি?’

‘তুমি চটপট এখানে এসে বসো। কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে!’

বুরুনের হাতে পায়ে কয়েকটা ফিতে বাঁধতে বাঁধতে বৃদ্ধ বললেন,’আমি একজন বিজ্ঞানী, নাম শঙ্কু। আর এটা আমার নতুন আবিষ্কার….ডিসটর্ট মেমব্রেন। তুমি এই পৃথিবীর কেউ নয়। আমায গবেষণা যে নিখুঁত তা আমি জানতাম। কিন্তু, প্রযুক্তিগত অদৃষ্টবাদ যতোই মাথানাড়া দিক, অদৃষ্টেরও যে একটা প্রযুক্তি রয়েছে, সেটাকে কি আর বাদ দেওয়া চলে? অনর্থ হয়ে যাবে।’

লোকটা যে একনাগাড়ে কি বলে গেল, কিছুই বুঝতে পারনে না বুরুন।

কয়েক সেকেন্ড মাত্র! বুরুন দেখতে পায়, তার হাতে পায়ে ফিতে বেঁধে একটা লাল বোতামে চাপ দিতেই সব ধোঁয়া! চিচিং ফাঁক!

(নকুড় বাবু ও এল ডোরাডোই হোক কিংবা শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের অদ্ভুতূড়ে সিরিজ…..নিজ নিজ জায়গায় চরিত্রগুলো না থাকলে যে কি অঘটনটাই না ঘটতো, !)

Sounds Interesting? Share it now!

You May Also Like

Create✨

Oops...Sorry !

You have to Login to start creating on Youthesta.

Don’t have an account? Register Now

Not from Behala College but still Interested? Request