একটা ৬ বছরের বাচ্চা মেয়ে রোজ এক কিলোমিটার পায়ে হেঁটে স্কুলে যেত। হঠাৎ করেই একদিন রাস্তার পাশে একটা ছোট্ট গলিতে একটা রিক্সা দেখতে পায় প্রথম দিন সেই জিনিসটাকে কোনরকম পাত্তা না দিয়ে নিজের গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যায় কিন্তু এরপরই যখন এটা তিন চার দিনে গিয়ে আটকায় তার মনে প্রশ্ন জাগে এই অদ্ভুত দেখতে রিক্সাটা এখানে কি করছে? তাই সে ঠিক করে নেয় পরের দিন সে স্কুলে যাওয়ার নাম করে ওই রিক্সাটা দেখতে যাবে। অতএব সে অনেকটা মনে কৌতুহল নিয়ে সেই রিকশাটির দিকে এগিয়ে যায় কিন্তু সেখানে গিয়ে এসে দেখতে পায় সেখানে শুধু এই রিক্সাটাই নেই তার মধ্যে বসে আছেন একজন চালক। তাকে দেখতে অনেকটা জাদুঘরের মত। তাই সে চালক তাকে গিয়ে বলে “তুমি কি এই রিক্সাটার মালিক?” চালকটির উত্তরে বলে“ হ্যাঁ”। মেয়েটি বলে “তাহলে তুমি রিক্সা না চালিয়ে এখানেই সব সময় বসে থাকো কেন”? লোকটি বলে-“ আমি রিকশা চালাই তবে রাস্তা ঘাটে না অন্য কোথাও।” মেয়েটির কৌতূহল বসত লোকটিকে জিজ্ঞাসা করে -“কোথায় যাও তুমি?” লোকটি বলে- “ভূত ,ভবিষ্যৎ ,বর্তমান দেশ-বিদেশ ,সব জায়গায় আমি যেতে পারি।” মেয়েটি বলে-“ সেসব আবার হয় নাকি বোকা পেয়েছ আমায়? চালকটি বলে তাহলে যাবে নাকি? দেখবে কোথায় যাই? আমি মেয়েটি একটু চিন্তা করলেও বলে হ্যাঁ যাবো কোথায় নিয়ে যাবে আমায়।” চালক টি বললো-“ সুলতানী যুগ যাবে?”মেয়েটি বলে -“সে আবার কোথায়? সুলতানী যুগ বা কি?” চালকটি বলে- “গেলেই বুঝতে পারবে ।তাহলে চলো যাওয়া যাক!”
চালকটির বলার সাথে সাথেই মেয়েটি দেখতে পেল কেমন যেন ম্যাজিকের মত অদৃশ্য হয়ে গেল। কিছুক্ষণ যেতেই সে আবার গাছপালা মাটি আকাশ দেখতে পেয়ে কিছুটা স্বস্তি পেল। কিন্তু তার পরক্ষণই দেখল তার আশেপাশের বাড়ি ঘর রাস্তাঘাট একেবারেই এক নয় প্রথমে কিছুটা ভয় হলেও তারপর তার মজা লাগতে শুরু করল। চালক টি বললো,“ তুমি যাও আমি এখানেই আছি।” মেয়েটি কথাটি শুনে বলল -ঠিক আছে! ও এই বলে আবার সে যেতে শুরু করল। রাস্তা দিয়ে কিছুটা হাঁটতে হাঁটতেই দেখতে পেল একজন কৃষক ও তার বউ কে। সে সে ওই মহিলাটিকে জিজ্ঞাসা করল -“তোমরা কি এখানেই থাকো মহিলাটি উত্তর দিয়ে বলল হ্যাঁ জানো না বুঝি? মেয়েটি বলল“ না আসলে আমি ভিন রাজ্য থেকে এসেছি এখানকার মানুষের কথা জানতে।” মহিলাটি বলল ও তাই নাকি? মেয়েটি বলল হ্যাঁ। “ তা মেয়েটি বলল তোমাদের এখানে রাজা কে?” মহিলাটি উত্তর দিল“ ইব্রাহিম লোধি।”মেয়েটা বলল -“তোমরা কি সবাই এখানে চাষ করেই খাও?” মহিলাটি উত্তরে বলে -“সবাই না শুধুমাত্র নিম্ন পদস্থ লোকজনেরাই এই চাষ করে রাজমিস্ত্রির কাজ করে পাথরের মিস্ত্রি হয়েই পেট চালায়। আর বড় বড় বাবুরা কোনো কিছুর পেছনে টাকা খরচ করতে দুবার ভাবে না।”
মেয়েটি মহিলাটির শরীরের অবস্থা দেখে জিজ্ঞাসা করে -“তুমি এত রোগা কেন? মাছ মাংস খাও না? মহিলাটি বলে মাছ মাংস সে আবার কি গো সেসব বড়লোকেরা খায় আমরা নয়। আমাদের ওই একবেলা খিচুড়িতেই চলে যায় মাংসের কি স্বাদ হয় আমরা চিনি না ।” মেয়েটি বলে তোমাদের কত দুঃখ তাই না? তোমাদের গায়ে নির্দিষ্ট কাপড় নেই খাবার এক বেলা খাও… মেয়েটি কে পুরোটা শেষ করতে না দিয়েই বলে মহিলাটি বলে-“ আরে ছাড়ো তো সব দুঃখ থাকলে কি হবে বিভিন্ন পালা পর্ব নিয়ে আমরা একসাথে উৎসব পালন করি। একসাথে মজা করে দিন কাটাই দুঃখ তখন আর গায়ে লাগে না।”
মেয়েটির মনের স্বস্তি আসে। তারপরই সে পিছন থেকে একজন ডাক শুনতে পায় দেখতে পায় চালক কি তাকে ডাকছে। সে ছুটে গিয়ে চালককে জিজ্ঞাসা করে কি হয়েছে চালকটি বলে -“কিগো বাড়ি যাবে না? তোমার স্কুল ছুটির যে সময় হয়ে এল “।এই বলে সে আবার রিকশায় করে বাড়ির রাস্তায় ফিরে আসে। সে চালকটিকে বলে “আমি আরো জায়গায় যাব কিন্তু পরের দিন”। বলেই সে বাড়ির দিকে রওনা হয়ে যায়। পরের দিন সে রাস্তায় এসে দেখতে পায়। রিক্সাটি আর নেই না আছে সেই চালক। এরপর কেটে যায় আরো ১২ বছর সে এখন কলেজ পড়ুয়া। সে এখনো সেই স্মৃতি ভুলতে পারে না। সে যখনই কষ্ট পায় তখনই সে মনে করে হাজারো কষ্টের মধ্যে মুখে হাসি নিয়ে এগিয়ে চলতে হয়। কলেজে উঠে সে একটা বই লিখে আমার গল্প আর সেই মেয়েটি আর কেউ নয় সেটা হলাম আমি।